জাগ দেওয়ার পানি নেই, পাবনায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে পাট

পানির অভাবে কেটে স্তূপ করে রাখা পাট নষ্ট হচ্ছে মাঠেই। ছবি: স্টার

সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় চলতি মৌসুমে পাবনায় সর্বাধিক পরিমাণ পাটের আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু পানির অভাবে জাগ নিতে না পারায় বেশিরভাগ পাটগাছ শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের জমিতেই।

সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাটচাষীদের এমন দুর্দশা চোখে পড়েছে। দেখা গেছে, অনাবৃষ্টিতে জমির কাছাকাছি জলায়শয়গুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড খরতাপে জমিতে থাকা পাটগাছের একপ্রকার পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।

খরতাপে পুড়তে থাকা পাটগাছ। ছবি: স্টার

কৃষকদের ভাষ্য, এসব পুড়ে যাওয়া গাছ থেকে কোনো আঁশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর যারা পাট জাগ দেওয়ার জন্য জমি থেকে দূরে ভাগ্যক্রমে কোনো জলাশয় পেয়ে গেছেন, তাদের পরিবহন খরচের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় ফলন ভালো হলেও তা হাসি ফোটাতে পারছে না এখানকার কৃষকদের মুখে।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি বছর জেলার ৯ উপজেলার ৪০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এখান থেকে ১ লাখ টনের বেশি পাটের উৎপাদন পাওয়ার কথা। কিন্তু সময়মতো জাগ দিতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।

মাঠেই শুকিয়ে যাওয়া পাটগাছ এখন ব্যবহৃত কেবল খড়ি হিসেবে। ছবি: স্টার

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার থানাপারা এলাকার কৃষক মাহাতাব মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে জানা, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। কিন্তু আশপাশের কোথাও জাগ দেওয়ার মতো পানি না থাকায় ২ বিঘা জমির পাট কেটে তা আরও প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের একটি জলাশয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে করে তার পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি খরচও।

মাহতাব বলেন, 'জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় ৩ বিঘা জমির পাট এখনো কাটতে পারিনি। জমিতেই অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে আর আঁশ পাওয়া যাবে না।'

জলাশয়ে পানি নেই। ছবি: স্টার

একই অবস্থা এই উপজেলার উত্তরচক গ্রামের কৃষক তোরাব উদ্দিন বিশ্বাসের। পানির অভাবে তার এক বিঘা জমিতে লাগানো পাটগাছের পুরোটাই এরমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।

তোরাব বলেন, 'আষাঢ় মাসের মধ্যেই পাট কেটে জাগ দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আশপাশের কোন খাল-বিলে এখন পানি নেই। ১ বিঘা জমির পাট কেটে গাড়ি ভাড়া করে দূরের গ্রামে নিয়ে গিয়ে জাগ দেওয়ার যে খরচ, তা দিয়ে উৎপাদন খরচ তোলা যাবে না।'

পাট জাগ দেওয়ার জন্য দূরে কোথাও পানির খোঁজ হয়তো মিলেছে। তাই তা গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে বেড়েছে পরিবহন খরচ। ছবি: স্টার

তোরাবের ভাষ্য, তার লাগানো পাট এখন খড়ি হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই।

চাটমোহর উপজেলার পাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আমির হোসেনের কাছ থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিমন পাট ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাটের এই দর গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর একই সময়ে ভালো মানের পাট মনপ্রতি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

কোথাও কালেভদ্রে পানির দেখা মিললেও সেখানে একসঙ্গে অনেক পাট জাগ দেওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে এর গুণগত মান। ছবি: স্টার

আমির হোসেন বলেন, 'পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে কম জায়গায় বেশি পরিমাণ পাট জাগ দেওয়ায় নোংরা পানিতে পাটের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, আঁশের রঙ কালো হয়ে যাচ্ছে। এতে দাম কম পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, 'পাট জাগ দিতে যাতে কৃষকদের কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য ইতোমধ্যে সেচ প্রকল্পের ক্যানেলগুলোতে পানি সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্লুইচ গেট খুলে বিলে পানি ঢোকানোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

ACC to get power to probe corruption by Bangladeshis anywhere, foreigners in Bangladesh

The Anti-Corruption Commission (ACC) is set to receive sweeping new powers under a proposed ordinance that will allow it to investigate corruption by Bangladeshi citizens, both at home and abroad, as well as by foreign nationals residing in the country. .The draft Anti-Corruption Commissio

35m ago