তিস্তা চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকা লজ্জাজনক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এটা 'দুর্ভাগ্যজনক' এবং 'লজ্জাজনক' যে চুক্তিটি ১১ বছর ধরে ঝুলে আছে।

আজ সোমবার আসামের গুয়াহাটিতে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা ১১ বছর ধরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে পারিনি। এটা লজ্জারও। আমরা প্রস্তুত ছিলাম, তারাও প্রস্তুত ছিল, তবুও চুক্তিটি হয়নি। ভবিষ্যতে পানির জন্য একটি বড় হাহাকার তৈরি হবে এবং আমাদের এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'

২৮-২৯ মে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত নদী সম্মেলনের ফাঁকে এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলার সময় মোমেন বলেন, দুটি দেশের ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। এই দুই পক্ষই অভিন্ন নদী সমূহের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ভারতের অংশীদার হতে এবং একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। 'অববাহিকা এলাকার মানুষের কল্যাণের জন্য দুই পক্ষের মানুষেরই যৌথ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।'

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'তিস্তা নদী তিস্তা কংশ হিমবাহে উৎপন্ন হয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রবেশের আগে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে তিস্তার ক্যাচমেন্ট এলাকাগুলো ভারতকে বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে এটি নিয়ে সংঘাত তৈরি হয়। ২০১১ সালে ভারত তিস্তার পানির ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার করতে সম্মত হয়েছিল এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে শুষ্ক মৌসুমে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখেছিল। তবে,পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কঠোর বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা খুব আশাবাদী যে ভারত চুক্তির ব্যাপারে এগিয়ে আসতে রাজি হবে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গও সম্মত হবে। এবং আমরা এটি অর্জন করতে পারব।'

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'চলতি বছর আসাম ও বাংলাদেশে একই সময়ে বন্যা হয়। আমাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, যৌথভাবে বন্যার আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং নদীগুলোর যৌথ ব্যবস্থাপনা উভয় দেশের জন্যই উইন-উইন।'

বেশকিছু গণমাধ্যমের গুঞ্জন উঠেছে, তিস্তা নদীর ওপর ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনা করছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য নদী অববাহিকা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট মোকাবিলা করা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের কাছে এখনও তিস্তা নিয়ে চীনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। চীন প্রাথমিকভাবে যেটি প্রস্তাব করছিল সেটি ছিল একটি ফরাসি প্রকল্প। ১৯৮৯ সালে ফরাসি প্রকৌশলীরা এটি ডিজাইন করেছিলেন। এটি ব্যয়বহুল ছিল, তাই তখন আমরা তহবিল সংগ্রহ করতে পারিনি। এখন চীনারা এর একটি অংশ হিসেবে তিস্তা প্রকল্পকে বাছাই করেছে। কিন্তু আমি মিডিয়া রিপোর্ট থেকে এটি জানতে পেরেছি। তারা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠায়নি। আমাদের এখন এটি কেমন হবে তা দেখতেই হবে। কারণ ভারত এখনও তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে আসলে তেমন কিছু করছে না। তাই তারা (চীন) একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, এটি (আমাদের জন্য) একটি লাভজনক প্রস্তাবও।'

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের সুবিধার জন্য তিস্তাকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি প্রযুক্তিগত সমীক্ষা চালানোর জন্য পাওয়ারচিনা বা চায়না পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'তবে, তিস্তা একটি অমীমাংসিত ইস্যু। তাই আমাদের জনগণ স্বাভাবিকভাবেই সরকারকে নতুন কোনো প্রস্তাব (সমাধান) ভেবে দেখার জন্য চাপ দেবে। এই কারণেই হতে পারে তিস্তার ওপর চীনা প্রকল্প নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে এত আলোচনা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

18h ago