ইলিশ উৎপাদনে ‘যুগান্তকারী সংযোজন’ গবেষণা জাহাজ

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ইলিশ গবেষণায় সম্প্রতি 'এম ভি বিএফআরআই গবেষণা তরী' নামে নতুন একটি জাহাজ যুক্ত হয়েছে।

জাহাজটিতে ফিশ ফাইন্ডার, ইকো সাউন্ডার, নেভিগেশন ও আধুনিক টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এর পাশাপাশি এটি ইলিশ গবেষণা ল্যাবরেটরি, নেটিং সিস্টেম, পোর্টেবল মিনি হ্যাচারিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিতে সজ্জিত।

ইলিশ গবেষকরা বলছেন, নতুন এই জাহাজটি দেশের ইলিশের উৎপাদন সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে যেতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ পর্যন্ত দেশে ইলিশ নিয়ে যে গবেষণা হয়েছে তা বাণিজ্যিক তথ্যের ভিত্তিতেই হয়েছে। সব তথ্য ছিল ধারণার ওপর, ফলে প্রকৃত চিত্র পাইনি।'

তিনি বলেন, 'এই জাহাজের মাধ্যমে ইলিশের গতি প্রকৃতি, কোথায় কোথায় ডিম দেয়, মাইগ্রেট করছে কি না—সব ধরনের তথ্য জানা সম্ভব। জাহাজের সাহায্যে গভীর সমুদ্রে অক্সিজেনের অবস্থা কী পর্যায়ে আছে তা-ও জানা যাবে। ফলে ইলিশ গবেষণায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি অন্যান্য মাছের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে সাহায্য করবে এই জাহাজ। তবে এর জন্য দক্ষ গবেষকদের নিয়োগ দিতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইলিশের প্রজননসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে বা ১০ বছর পর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা জানা সম্ভব এই জাহাজের মাধ্যমে।'

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিছুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশে ২০০৩ সালে ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন ২ লাখ মেট্রিক টনের নিচে নেমেছিল। বর্তমান উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বে প্রথম। ইলিশের সহনশীল উৎপাদন ধরা হয় ৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এই জাহাজ যুক্ত হওয়ায় সহনশীল উৎপাদনে পৌঁছানো সম্ভব।'

১৯৮৮ সাল থেকে ইলিশ নিয়ে কাজ করা এই গবেষক বলেন, 'ইলিশ গবেষণা দলের কৌশল দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যানবাহনের খুব প্রয়োজন ছিল। এই জাহাজটি নিয়ে সব জায়গায় যাওয়া যাবে। ফলে কাজের গতি, বিস্তৃতি বেড়ে যাবে।'

তিনি বলেন, 'এই জাহাজের মাধ্যমে মা ইলিশ কোথায় থেকে আসে, কোথায় ডিম পাড়ছে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাবে। ইলিশের ডিম পাড়ার সুযোগ তৈরি, জাটকা সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে ইলিশ গবেষণা জাহাজ। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে এটি।'

ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আবুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে ইলিশের সুস্থিত মজুদ, আহরণমাত্রা, খাদ্যের প্রাচুর্যতা, সম্ভাব্য নতুন প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ, পূর্বে চিহ্নিত অভয়াশ্রমের (প্রজনন ক্ষেত্র ও বিচরণ ক্ষেত্র) বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য জানার জন্য ধারাবাহিক গবেষণা প্রয়োজন। এই সব গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নদীতে সার্বক্ষণিক থাকা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে নতুন জাহাজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'

তিনি বলেন, 'অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি এই জাহাজটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম। জাহাজটি তৈরিতে ভ্যাট ও আয়করসহ মোট খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।'

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইলিশ নিয়ে গবেষণার জন্য বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। এই জাহাজের মাধ্যমে সাগর-উপসাগরসহ সব জায়গায় যাওয়া যাবে এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। ফলে আমরা জানতে পারবো নদীতে কী পরিমাণ ইলিশ আছে, কতটুকু ধরা যাবে বা কতটুকু ধরলে ভারসাম্য বজায় থাকবে। সমুদ্রে প্রাকৃতিক খাবার কতটা আছে সেটাও জানা সম্ভব হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

16h ago