এমএস রডের দাম টনে ১ লাখ টাকা ছাড়াতে পারে

বরিশাল শহরে নির্মাণাধীন একটি ভবন। ছবি: টিটু দাস/স্টার

চলমান মার্কিন ডলার সংকটের মধ্যে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় শিগগির এমএস (মাইল্ড স্টিল) রডের দাম টন প্রতি ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

বিএসআরএমের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবহৃত স্ক্র্যাপ স্টিলের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করা হয়। মার্কিন ডলারের উচ্চ মূল্য এবং সাম্প্রতিক জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।'

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকায় ৬০ গ্রেডের এমএস রড প্রতি টন ৯৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যেখানে মাত্র ১ মাস আগেও এর দাম ছিল ৯১ হাজার ৫০০ টাকা।

গত ৬ মাসে স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য প্রায় ২২ শতাংশ বেড়েছে। এই হিসাবে, ইস্পাত প্রস্তুতকারকদের কাঁচামাল আমদানি করতে প্রতি মার্কিন ডলারে ১১২ টাকায় লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে।

এ ছাড়া, তারা এলসি খুলতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা কারখানাগুলোকে পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে বাধাগ্রস্ত করছে।

শিল্পে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তপন সেনগুপ্ত বলেন, 'ইস্পাত তৈরির ইউনিটের উৎপাদন খরচ কারখানা ভেদে প্রতি টনে দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা বাড়বে।'

উদাহরণস্বরূপ, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শক্তি ব্যবহার করে প্রস্তুতকারকদের প্রতি টন ইস্পাত উত্পাদন করতে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা খরচ করতে হবে, যেখানে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতে খরচ বাড়বে দেড় হাজার টাকা।

কারণ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা থেকে ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করেছে।

একইভাবে, বড় শিল্পের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে ১৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সভাপতি মানোয়ার হোসেন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে এসব উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'এই মূল্য বৃদ্ধি ইস্পাত উৎপাদনের জন্য জ্বালানি খরচ দ্বিগুণ করবে। এই অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে এমএস রডের যে দাম হবে তাতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে।'

তিনি জানান, ইস্পাত তৈরিতে উৎপাদন খরচের প্রায় ১৫ শতাংশ জ্বালানির জন্য ব্যয় হয়। এর অর্থ, প্রতি টন ইস্পাত উৎপাদনে যদি ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য খরচ ১২ হাজার টাকা।

বর্তমানে প্রতি টন স্টিল বিলেটের উৎপাদন খরচ ৮১ হাজার ৩০০ টাকা, যার পরিচালন ব্যয় ২০ হাজার টাকা এবং শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর ২ হাজার ২০০ টাকা।

পরিস্থিতি বিবেচনায় মোট উৎপাদন খরচ টন প্রতি ১ লাখ ৩ হাজার ৫৬০ টাকায় দাঁড়াবে।

মানোয়ার হোসেন আরও বলেন, 'অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে, বিশেষ করে বেসরকারি খাতে, ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'

এই পরিস্থিতিতে লোকসান থেকে বাঁচতে তাদের স্বল্পমেয়াদী ঋণকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণে রূপান্তর করার দাবি জানিয়েছে বিএসএমএ।

অ্যাসোসিয়েশনটি সরকারকে কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলার সুবিধার্থে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিতে এবং গ্যাসের দাম একযোগে না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

বিএসএমএর মহাসচিব মো. শহীদুল্লাহ বলেন, 'উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় উৎপাদকদের দাম সমন্বয় করতে হবে।'

এটি ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারি ব্যয়ে চাপ সৃষ্টি করবে বলে তিনি যোগ করেন।

শহীদুল্লাহ জানান, ইতোমধ্যে গত ৬ মাসে বিক্রি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

কেএসআরএমের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০ লাখ মানুষের চাকরি এখন হুমকির মুখে।'

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

5h ago