শুল্ক সুবিধা সত্ত্বেও চীনে রপ্তানি কমেছে

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০২৩
স্টার ফাইল ফটো

গত অর্থবছরে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬৭৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনা মহামারি চলাকালে রপ্তানি আয়ের হিসাব বাদ দিলে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয় এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশের সীমিত সংখ্যক রপ্তানি পণ্য, মধ্যবর্তী পণ্য ও প্রযুক্তি পণ্যের অভাব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে রপ্তানি বৃদ্ধির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটি ৯৮ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ দেয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরের রপ্তানি আগের অর্থবছরের ৬৮৩ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে ১ শতাংশ কমেছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৬০০ মিলিয়ন ডলার।

চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৬০ শতাংশই আসে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাত থেকে। আর জাতীয় রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে।

বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মহাসচিব আল মামুন মৃধা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টস, কিন্তু চীনও এসব পণ্য তৈরি করে। তবুও তারা ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে এবং এই খাতে বাংলাদেশকে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়।'

'তাই চীনে পোশাক রপ্তানির খুব একটা সম্ভাবনা নেই। তবে সেখানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা এবং সামুদ্রিক মাছ রপ্তানির সম্ভাবনা আছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'চীনে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা আছে। এছাড়া সেখানে মানসম্মত তাজা খাবার, চিংড়ি, কাঁকড়া এবং ঈল মাছের কিছু চাহিদা আছে। আমরা তাদের মান মেনে চলতে পারলে এসব পণ্যের রপ্তানি বাড়বে।'

আমদানির দিক থেকে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। আর এমন সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছে, যখন চীন থেকে আমদানি বাড়ছে। ফলে, দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ঘাটতি আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীন থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। বিশেষ করে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, তুলা, কাপড়, ফিলামেন্টস, স্টেপল ফাইবার, প্লাস্টিক পণ্য, লোহা ও ইস্পাত, ফার্মাসিউটিক্যাল ও রাসায়নিক পণ্য।

এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করেন।

বাংলাদেশে নির্মাণাধীন চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমদানি-বিকল্প পণ্য উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে উল্লেখ করে মৃধা বলেন, 'আমরা চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আনুষঙ্গিক ও আমদানি-বিকল্প পণ্যের কারখানা স্থাপনের আমন্ত্রণ জানাই।'

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বেশ কয়েকটি চীনা কোম্পানি তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে মনোনিবেশ করেছে, এ কারণে চীনে রপ্তানি কমছে।

'যেহেতু তারা তাদের স্থানীয় বাজারের দিকে মনোনিবেশ করছে, তাই আমাদের সুযোগ সংকুচিত হবে। তবে, বাণিজ্য বিরোধ এবং চীনা নির্মাতাদের মনোযোগের পরিবর্তন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য অন্যান্য দেশে রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, 'চীনে চামড়া রপ্তানির প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়েও কম। চীনা ক্রেতারা কমপ্লায়েন্সের অভাবে ভাল দাম দেয় না।'

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫২.৮৫ মিলিয়ন ডলারের কাঁচা চামড়া ও চামড়া রপ্তানি করেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, চীনে রপ্তানি কমার অন্যতম কারণ প্রধান রপ্তানি পণ্যে মিল থাকা।

তিনি বলেন, 'চীন যে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করে, আমাদের কাছে তাও নেই। ভারত সে দেশে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল রপ্তানি করে।'

'এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় বাংলাদেশের ৫ হাজার পণ্যে শুল্ক সুবিধা দিচ্ছে চীন। তবুও, উচ্চ মূল্য সংযোজনের বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশি উত্পাদনকারীরা এই সুবিধার সর্বোচ্চ সুযোগ নিতে পারেনি। এটি চীনের অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষার কৌশল হতে পারে,' বলেন মোয়াজ্জেম।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, চীনে রপ্তানি আয় কমার বিষয়টি আমরা অবগত আছি।

তিনি বলেন, 'চীন সেমিকন্ডাক্টরের মতো মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করে, আমরা সেগুলো উৎপাদন করি না। চীন যেসব পণ্য আমদানি করে, সেগুলো রপ্তানির সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে। সেখানে মাছ ও কাঁকড়ার রপ্তানি বাড়ছিল, কিন্তু করোনার পর চীন কঠোর নিয়ম মেনে চলায় রপ্তানি কমেছে।'

আহসান জানান, চীনের বর্ধিত শুল্ক সুবিধা কীভাবে গ্রহণ করা যায়, সে বিষয়ে তার কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুপারিশ জমা দেয়নি। বাংলাদেশ-চীন চেম্বার বৈঠকের ফলাফল ও কার্যবিবরণী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মাঝে মাঝে জানায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka air turns unhealthy even before dry season

Dhaka air turns unhealthy even before dry season

With the dry season approaching, Dhaka city’s air quality has once again slipped to an unhealthy level, underscoring the inadequacy of the limited measures taken by the authorities to curb air pollution.

11h ago