‘১৫ বছরে দুর্নীতি ছিল বিদেশি বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা’

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: স্টার
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: স্টার

দুর্নীতি ও নীতিগত অসঙ্গতি গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।

তার মতে, ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো রক্ষণশীল নীতি থেকে সরে এসে সফলভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেছে।

'বিনিয়োগের সুবিধা তুলে ধরে নীতি তৈরি ও বাস্তবায়নের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে,' উল্লেখ করে আশিক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আর্থিক খাত বিশেষ করে ডলার ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে সংস্কার এ দেশে ব্যবসা বাড়াতে সহায়তা করবে। বড় আকারের বিনিয়োগ আনবে।'

'বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মালিকানা ও মুনাফা হস্তান্তরের পথ খোলা রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।'

তার ভাষ্য, 'আমরা বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পাশাপাশি জমি নেওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করছি। নীতির ধারাবাহিকতাও নিশ্চিত করছি।'

আশিক চৌধুরী জানান, মূল উদ্যোগগুলো মধ্যে একটি হলো অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করতে ও আরও বিনিয়োগের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে নভেম্বরে ডিজিটাল ফাইল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডি-নথি চালু করা।

তিনি বলেন, 'সরকারের শীর্ষ বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা বিডা খাতভিত্তিক প্রচার ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আনার প্রচেষ্টা জোরদার করছে।'

'আমরা সাফল্যের গল্প ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলো তুলে ধরে ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করছি। ভার্চুয়াল বিনিয়োগের সুযোগ আরও সহজ করতে ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাইট ভিজিটের আয়োজন করতে ডিজিটাল এনগেজমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করছি। আমাদের এসব সুবিধার লক্ষ্য হলো বেশি মূলধনের ব্যবসা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করা।'

'আমরা উদ্বেগ মোকাবিলা ও কাস্টমাইজড সমাধান দিতে আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স ও শিল্প সমিতিগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। বিনিয়োগকারীদের সময়োপযোগী ও সঠিক তথ্য দিতে আমাদের যোগাযোগ চ্যানেলগুলোও উন্নত করছি।'

আগামীতে বিডা ও বেজা বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়ানো ও দক্ষতা কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেবে। 'আমরা ইতিবাচক অভিজ্ঞতা দেওয়ার মাধ্যমে আগামী বছর বিনিয়োগের শীর্ষ সরকারি সংস্থা হতে চাই। মানুষই যাতে বাংলাদেশের দূত হতে পারেন।'

জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিডা নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা উন্নত করছে।

ভূমি অধিগ্রহণ, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ইউটিলিটি সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো দ্রুত সারতে অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে বিডা ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে।

তিনি বিশ্বাস করেন, স্থিতিশীল নীতি কাঠামোর পাশাপাশি এই প্রচেষ্টা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে।

আশিক চৌধুরী এইচএসবিসি সিঙ্গাপুরের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে অবকাঠামো ও টেকসই অর্থায়নে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড থেকে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। আমেরিকান এয়ারলাইন্সে ইউরোপ ও এশিয়ার ফাইন্যান্সের প্রধান এবং গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের পরামর্শক ছিলেন।

লন্ডন বিজনেস স্কুল থেকে ফাইন্যান্সে এমএসসির পর আশিক চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে ফাইন্যান্স ও অর্থনীতিতে বিবিএ ডিগ্রি নেন।

চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট আশিক চৌধুরী একজন স্কাইডাইভার। তিনি পতাকাসহ দীর্ঘতম ফ্রি ফলের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যে লাইসেন্সধারী প্রাইভেট পাইলটও।

Comments