চাকরির ক্ষেত্রে পার্থক্য গড়ছে ডিজিটাল দক্ষতা: জরিপ

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। ছবি: সংগৃহীত
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি নিয়োগদাতারা গত ৫ বছরে প্রতি ১০ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে এমন ৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ের ডিজিটাল জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে। সম্প্রতি এক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে।

চাকরি ও কর্মজীবন সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইন ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এই জরিপটি পরিচালনা করে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এই দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা ৯০ শতাংশ বেড়েছে।

তুলনামূলকভাবে, এই হার ভারতে ৭৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৭ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৬৪ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫ শতাংশ।

বাংলাদেশসহ উল্লেখিত ৫ দেশে এই চাহিদার গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭৫ শতাংশ।

সার্বিকভাবে, নিয়োগদাতারা গড়ে প্রতি ১০ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে এমন ৮ জনকে চাকরি দিয়েছেন, যাদের অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ের ডিজিটাল জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে। এ ছাড়া, প্রতি ১০ জনে ৪ জনের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের ডিজিটাল দক্ষতা রয়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া নিয়োগদাতাদের ৭০ শতাংশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ও ব্যবহারিক ডিজিটাল দক্ষতা এখন কর্মক্ষেত্রের অত্যাবশ্যক যোগ্যতা। তারা একইসঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ডিজিটাল দক্ষতার গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন।

এডিবি ও লিংকডইনের 'ডিজিটাল চাকরি ও ডিজিটাল দক্ষতা: এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিবর্তনশীল পটভূমিকা' শিরোনামের যৌথ প্রতিবেদনে এই জরিপের কথা বলা হয়েছে।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে লিংকডইনের 'অর্থনৈতিক গ্রাফ' ব্যবহার করে ডিজিটাল চাকরি, দক্ষতা ও যোগ্যতার পাশাপাশি চাকরির ধারায় মহামারির প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান 'ডিজিটাল কর্মক্ষেত্রে' পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পখাত, চাকরি ও চাকরিপ্রার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতার পটভূমিকা কীভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে, সে বিষয়েও এই প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হয়েছে।

যেসব দেশ জরিপের অংশ ছিল, সেগুলোতে শিল্পখাত ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

৪০ শতাংশেরও কম নিয়োগদাতা জানান, কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো বা নতুন দক্ষতা শেখানোর জন্য তাদের বাইরের কোনো সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় নিয়োগদাতারা লিংকডইন, কোর্সেরা ও গুগল অ্যাকাডেমির কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, সেলসফোর্স ও ওরাকলের কথাও অনেক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করেছে।

কর্মীদের দক্ষতার উন্নয়ন ও নতুন দক্ষতা তৈরিতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কী, এ প্রশ্নের জবাবে মার্কিন ও ভারতীয় নিয়োগদাতারা প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় না থাকার কথা জানান।

বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের নিয়োগদাতারা অবকাঠামোগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেন, যার মধ্যে আছে বাজেট স্বল্পতা ও সঠিক প্রশিক্ষণ অংশীদার চিহ্নিত করতে না পারার মতো বিষয়গুলো।

এ ছাড়া, অন্যান্য সমস্যার মধ্যে আছে কর্মীদের অনুপ্রেরণার অভাব ও আত্মোন্নয়নের মানসিকতা না থাকা। ফলে অনেকেই শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

জরিপ মতে, চাকরির আবেদনপত্র 'প্রায়ই' অন্তত একটি ডিজিটাল দক্ষতার উল্লেখ থাকে বলে জানান ৩৬ শতাংশ নিয়োগদাতা এবং 'বেশিরভাগ সময়' থাকে বলে জানান ২৬ শতাংশ।

ভারত ও বাংলাদেশে স্বল্প সংখ্যক চাকরিতে অসংখ্য প্রার্থী আবেদন করেন এবং চাকরি পেতে তাদেরকে অন্যদের থেকে নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে হয়। এই ২ দেশের ৮০ শতাংশ চাকরির আবেদনে ডিজিটাল দক্ষতা থাকার দাবি করা হয়। চাকরির নিরাপত্তার দিক দিয়ে আরও অনেক উন্নত অবস্থানে থাকা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এই হার ২০ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতিগুলোতে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে লিংকডইনের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়ার হার প্রতি বছরই তার আগের বছরের তুলনায় গড়ে ৯ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।

যেসব লিংকডইন সদস্য তাদের প্রোফাইলে ডিজিটাল দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং যারা চাকরি পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন, তাদেরকে এই হিসেবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ।

মহামারির কারণে ডিজিটাল নিয়োগ ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসে অর্ধেকে নেমে আসে। তবে ২০২০ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ২০২১ সালের প্রথম কয়েক মাসে এটি দ্রুত পুনরুজ্জীবিত হয় এবং এই ধারায় গতি পায়।

লিংকডইনের বিশ্লেষণ মতে, মহামারির সময়েও ডিজিটাল দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এমন চাকরির সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চাকরির পোর্টাল বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাসরুর বলেন, 'আমি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত। ডিজিটাল দক্ষতার চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা শুধু অভ্যন্তরীণ চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, আউটসোর্সিং ও রপ্তানি নির্ভর খাতেও বেড়েছে। করোনার পর গত বছর আমরা সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা (আইটিইএস) রপ্তানি খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছি।'

ফাহিম আরও বলেন, 'তবে চাহিদা অনুযায়ী ডিজিটাল দক্ষতার সরবরাহ বাড়েনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রোগ্রামিং, ওয়েব মার্কেটিং ও ডাটা অ্যানালিটিক্সের মতো ডিজিটাল দক্ষতার স্বল্পতা রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরও অনেক বেশি করুণ। বলা যায়, সরবরাহের দিক দিয়েও একটি ডিজিটাল বিভাজনের অস্তিত্ব রয়েছে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Former president Hamid airport CCTV footage

The story of Hamid’s exit

Security footage obtained and analysed by The Daily Star shows that Hamid's car reached the barrier gate of the VIP terminal at 12:46am on May 8

13h ago