‘মাসুদ আলী খান আমাদের নাটকের পথপ্রদর্শক’

মাসুদ আলী খান। ছবি: স্টার

দেশের প্রথম মঞ্চ নাটকের দল 'ড্রামা সার্কেল'র সদস্য ছিলেন গুণী অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খান। একাধারে মঞ্চ-টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র ও বেতার নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। অনেক কালজয়ী নাটকে অভিনয় করে পেয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসা।

অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদকসহ অনেক পুরস্কার। মেরিল প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মারা গেছেন তিনি।

মাসুদ আলী খান অভিনীত বিটিভির 'কূল নাই কিনার নাই' আলোচিত একটি নাটক। এই নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি প্রথম অভিনয় করেন 'নদী ও নারী' সিনেমায়। এই সিনেমায় অভিনয় করে সেই সময়ে বেশ পরিচিতি পান। 'আসগর' চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সিনেমাটির পরিচালক সাদেক খান।

এ ছাড়া, জোনাকীর আলো, দীপু নম্বর টু, মাটির ময়না, দুই দুয়ারি, মোল্লাবাড়ির বউ, শঙ্খনীল কারাগার সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দীপু নম্বর টু সিনেমায় শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করে শিশু-কিশোরদের মাঝে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।

সাড়া জাগানো ধারাবাহিক নাটক 'কোথাও কেউ নেই', 'এইসব দিনরাত্রি'তে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন মাসুদ আলী খান। তা ছাড়া, একান্নবর্তী, ৬৯, পৌষ ফাগুনের পালা—ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অসংখ্য এক ঘণ্টার নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।

এদেশের প্রথম মঞ্চ নাটকের দল 'ড্রামা সার্কেল'র সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়ে অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে—রক্ত করবী, রাজা-রানি, বহিপীর, ইডিপাস ইত্যাদি।

স্কুলজীবনে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটির নাম ছিল 'রানা প্রতাপ সিংহ'।

ছবি: সংগৃহীত

মাসুদ আলী খান সম্পর্কে একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, মাসুদ আলী খান আমাদের নাটকের ঐতিহ্য। এ দেশের নাটকের ইতিহাস তিনি। নাটকে তার অবদান অনেক। দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় আমার সঙ্গে। একসময় করাচিতে থাকতেন। তারপর দেশে চলে এলেন। নাটকের প্রতি তার ছিল প্রবল আগ্রহ। তারপর ড্রামা সার্কেলে যুক্ত হন। আমরা একসঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। অভিনয়ের প্রতি তার প্রবল ভালোবাসা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার লেখা নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। আজ চলে গেলেন তিনি। গভীর শ্রদ্ধা রইল তার প্রতি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত আরেক অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, মাসুদ আলী খান আমাদের নাটকের পথপ্রদর্শক। একজন সুশীল, সজ্জন ভদ্রলোক ছিলেন। ভালো মানুষ তো বটেই। ন্যাচারাল অভিনয়ের স্কুল যদি থাকে, সেই স্কুলের অন্যতম একজন তিনি। খবরটি শোনার পর খারাপ লাগছে। এক এক করে আমাদের সিনিয়ররা চলে যাচ্ছেন। কষ্ট লাগছে। আমরাও থাকব না। আমাদেরও চলে যেতে হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। মাসুদ আলী খানের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক অনেক বছর আগে। দেখা হলেই বলতেন, হায়াত কেমন আছ? এখন আর কেউ বলবেন না। তার মুখ থেকে এই ডাকটি মিস করব। আমার বইয়ে তার কথা লেখা আছে। বইটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ হবে। কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারলেন না। তার প্রতি শ্রদ্ধা।

তারিক আনাম খান বলেন, অসম্ভব গুণী একজন অভিনেতাকে হারালাম। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান। অনেক গুণী অভিনেতা ছিলেন। তার কাছ থেকে সারাজীবন শিখেছি। মানুষকে সম্মান করতেন। অভিনয় ভালোবাসতেন। সারাজীবন অভিনয় করে গেছেন। সবাইকে আপন করে নেওয়ার মতো বড় মন ছিল তার। আজ তিনি চলে গেলেন। অভিনয়ে তার অবদান আমরা ভুলব না। অনেক সাড়া জাগানো নাটকের শিল্পী ছিলেন। সৃষ্টিকর্তা তাকে জান্নাত নসিব করুন। যেখানে আছেন শান্তিতে থাকুন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা কেরামত মাওলা বলেন, ষাটের দশকে মাসুদ আলী খানের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি সেই সময়ে ড্রামা সার্কেল করতেন। আমিও সেখানে কাজ করি। আমরা একসঙ্গে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছি। আমরা রবীন্দ্র শতবর্ষ উদযাপন করেছিলাম। ড্রামা সার্কেলের হয়ে আমরা রক্ত করবী, তাসের দেশ, রাজা-রানি, ইডিপাস, মানচিত্র নাটকে অভিনয় করেছিলাম। বিটিভির বেশ কয়েকটি নাটকেও একসঙ্গে অভিনয় করি। সময়-অসময় নাটকের কথা মনে পড়ছে। তিনি ছিলেন একজন হৃদয়বান মানুষ। ভালো মানুষ ছিলেন। ছোট ছিলাম, তারপরও বন্ধুর মতো ব্যবহার করতেন। তার মতো মানুষের দুনিয়ায় আসা ও চলে যাওয়া—দুটোই বিরল।

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka air turns unhealthy even before dry season

Dhaka air turns unhealthy even before dry season

With the dry season approaching, Dhaka city’s air quality has once again slipped to an unhealthy level, underscoring the inadequacy of the limited measures taken by the authorities to curb air pollution.

11h ago