বন্যার পানিতে দোকানের হিসাবের খাতা নষ্ট, বাকি আদায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

হিসাবের খাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাকি টাকা তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দোকানদার। ছবি: স্টার

বন্যায় সায়েদুল হকের দোকানের চাল পর্যন্ত পানি উঠে যায়। দোকানের সব মালামালের পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যায় হিসাবের খাতা।

এ অবস্থায় 'বাকি টাকা' আদায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা শুভপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী মোড়ে মুদির দোকান পাভেল স্টোরের মালিক সায়েদুল।

বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামের লোকজন বাকিতে কেনাকাটা করে বেশি। আমার দোকানের বেশিরভাগ ক্রেতা সপ্তাহ বা মাসের বাজার একসাথে করেন। কিন্তু বন্যার পানিতে বাকির খাতা খাতা নষ্ট হয়ে গেছে।'

'অন্তত ৫৫-৬০ হাজার টাকা পাব লোকজনের কাছে। খাতা না থাকায় এখন কীভাবে টাকাগুলো আদায় করব তা বুঝতেছি না,' বলেন তিনি।

ফেনী সদর উপজেলা, ছাগলনাইয়া উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানদার তাদের হিসাবের খাতাগুলো রোদে শুকাচ্ছেন।

সদর উপজেলার ছনুয়া বাজারের মুদি দোকানি মন্টু মিয়া বলেন, 'লোকজনের কাছে ২২ হাজার টাকা পাই। বাকির খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্রেতার নাম ও টাকার হিসাব কই পাব।'

ফেনীর দুর্গত এলাকাগুলোর দোকানিদের মধ্যে বেশিরভাগই নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল বের করতে পারেনি। গত ২১ আগস্ট থেকে জেলার বিভিন্ন নিচু এলাকাগুলো ডু্বতে শুরু করে এবং ২২ আগস্ট তলিয়ে যায় ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়াসহ আশপাশের উপজেলা।

ফাজিলপুর ইউনিয়নের শিবপুর জলদাস পাড়ার মুখে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী রিয়াজ উল্লাহ বলেন, 'পানি ঢুকে সব কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। কাঠের তাকগুলোতে শ্যাওলা জমে গেছে। কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠব ভেবে কুল পাচ্ছি না।'

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুহুরীগঞ্জ এলাকার আসবাব ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দিন বলেন, '১০টি সেগুন কাঠের খাট, ডাইনিং টেবিল, আলমিরাসহ নানা আসবাব ভিজে গেছে। এগুলো আর নতুন দামে বিক্রি সম্ভব নয়।'

চিন্তিত কৃষক

ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ছবি: স্টার

ঘরের সামনে সড়কে পলিথিনের উপর চারা গজিয়ে যাওয়া ধান নাড়াচড়া করছিলেন কৃষক আবদুল মালেক। বন্যার পানিতে ভিজে তার প্রায় ২০ মন বা ৮০০ কেজি ধান পচে গেছে।

ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের কৃষক মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছয়মাসের খোরাকি হিসেবে এই ধান মজুত করেছি। কিন্তু বন্যার পানি সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ত্রাণ দিয়ে দুর্যোগ কাটাতে পারলেও কীভাবে ভবিষ্যতের খোরাকি যোগাড় করবে তা বুঝতে পারছি না।'

ঘরে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে পাশের একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন মালেক। বস্তাভর্তি ধানগুলো ঘরের মেঝেতে কাঠের ওপর তুলে রেখেছিলেন। 

গত মঙ্গলবার সকালে পানি কমার পর বাসায় ফিরে তিনি দেখেন, ভয়াবহ পানি স্রোত তার ঘরের সবকিছু তলিয়ে নিয়ে গেছে।

আবদুল মালেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষিকাজ করে ৫ সদস্যের পরিবার চালাই। চারটা গরু আছে। একটা গাভির দুধ বিক্রি করে বাজার খরচ যোগান দিতাম। কিন্তু বন্যা আমার সবকিছু ওলট-পালট করে দিল।'

Comments

The Daily Star  | English
July uprising and the rise of collective power

July uprising and the rise of collective power

Through this movement, the people of Bangladesh expressed their protest using a language shaped by long-standing discontent.

10h ago