‘বিষ মেশানো মাংস খেয়ে শকুনের মৃত্যু,' মামলা করেছে বনবিভাগ

মৌলভীবাজারে বিলুপ্তপ্রায় ১৩টি শকুনের মরদেহ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের বড়কাপন এলাকা থেকে বিলুপ্তপ্রায় শকুনের ১৩টি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে।

আজ শুক্রবার ঘটনাটি তদন্ত করতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং আইইউসিএনের কর্মকর্তা ও গবেষক দল।

গতকাল সকালে সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কালারবাজারের কাছে বড়কাপন গ্রামের বুড়িকোনা বিল থেকে বনবিভাগের কর্মকর্তারা ১০টি মৃত শকুন উদ্ধার করেন। পরে দুপুরে সেখান থেকে আরও ৩টি মৃত শকুন উদ্ধার করা হয়।

মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, 'মৃত ১০টি শকুন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কর্মকর্তারা বস্তায় করে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। এগুলো ১০-১২ দিন আগে মারা গেছে বলে ধারণা করছি। সব পচে-গলে গেছে। শকুনগুলোর মৃত্যুর কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিলেট ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছি। ধারণা করছি, মৃত গরু কিংবা কুকুর অথবা শিয়াল খেয়ে শকুনগুলো মারা যেতে পারে।'

'অনেক সময় গরুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় এবং কুকুর-শিয়াল নিধনে গ্রামগঞ্জে বিষ জাতীয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এই প্রাণীগুলোর কোনোটি মারা যাওয়ার পর তার মাংস শকুন খেলে তারাও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে,' বলেন তিনি।

শকুন হত্যার ঘটনায় মৌলভীবাজার সদর থানায় বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা করেছে বন বিভাগ।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, 'মামলায় মো. রোকন ও মজনু মিঞার নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। বন বিভাগ থেকে শকুনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া এলাকা থেকে দুটি বিষের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে ওই বোতল দুটি থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।'

বন বিভাগের অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী। পুলিশ ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিলেটের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. এস এম নুরুল আমিন বলেন, 'শকুনগুলো গত ৭ তারিখে মারা গেছে। এখন সেগুলো পচে অবস্থা খারাপ। আমাদের এখানে যেটুকু পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ ছিল এ অবস্থায় তাও করার পর্যায়ে নেই। তারা যেটা বলছিলেন কেমিক্যাল কোনো অ্যাফেক্ট থেকে মৃত্যু হয়েছে। কেমিক্যাল টেস্ট করার সুযোগ সিলেটে নেই। ঢাকার মহাখালীতে জনস্বাস্থ্যের কর্মকর্তারা এই টেস্টগুলো করেন। আমরা তাদের এটা বলে দিয়েছি।'

বন বিভাগ ও আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬০টি শকুন ছিল। এর মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ছিল ৮০টি। এই ১৩টি শকুনের মৃত্যুর পর সংখ্যাটি আরও কমে গেল।

আইইউসিএন বাংলাদেশের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম বলেন, 'মহাবিপন্ন বাংলা শকুনগুলোর মরদেহ ল্যাবে পাঠিয়েছি। ল্যাব টেস্টের পর বুঝতে পারবো কী কারণে মারা গেছে। গরু খেলেও অনেক সময় শকুন মারা পড়ে। কারণ গবাদি পশুকে অনেক সময় ডাইক্লোফেনাক ইনজেকশন পুশ করা হয়।'

'আর দ্বিতীয় কারণ হলো শিয়াল স্থানীয় বাড়িঘরে হামলা করে হাঁস-মুরগি নিয়ে যায়। ফলে অনেকে শিয়ালকে বিষ খাওয়ায়। এতে শিয়াল মারা যায়। ওই শিয়ালের মাংস খেলে শকুনও মারা যায়। আমরা ১১ সদস্যের একটি টিম আজ সেখানে গিয়েছি এবং যতগুলো মৃত অ্যানিম্যাল ছিল সেগুলো মাটিচাপা দিয়েছি। যেন আর কোনো শকুন খেয়ে মারা না যায়।'

তিনি বলেন, 'দেশে সিলেটের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুন্দরবনে শকুনের আবাসস্থল রয়েছে। শকুন এখন লাল তালিকাভুক্ত প্রাণী। আমরা স্থানীয় এলাকার মসজিদে মাইকিং করেছি মানুষকে সচেতন করতে যেন বিষ প্রয়োগ করে কেউ শিয়াল না মারে। স্থানীয় বন বিভাগের একটি টিম সব এলাকায় মাইকিং করবে বলে জানিয়েছে। আশাকরি এর পুনরাবৃত্তি হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

15h ago