জামদানি শাড়ির যত্ন

জামদানি শাড়ির যত্ন
ছবি: জায়া

আবহমানকাল ধরে অধিকাংশ নারীর পছন্দের শীর্ষে জামদানি। জামদানির প্রতি বাড়তি আকর্ষণের কারণ অপূর্ব কারুকাজ সমন্বিত নকশা ও মিহি সুতা। জামদানি শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে মিহি সুতার বুননে যেন মিশে থাকে অজস্র গল্প আর কথকতা।

২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।

সঠিকভাবে যত্ন করতে না পারলে জামদানি শাড়ি খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বুনন খুব মিহি হয় বলে বাড়তি খেয়াল ও যত্নের প্রয়োজন হয় জামদানির শাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে।

চলুন দেখা যাক কীভাবে যত্নে রাখতে পারেন আপনার শখের জামদানি-

শাড়িতে ফলস লাগানো

জামদানি শাড়ি কেনার পরপরই আপনার প্রথম কাজ হবে পাড়ে ফলস লাগিয়ে ফেলা। এতে করে পাড়ও যেমন ভাঁজ হবে না, তেমনি কুচিগুলোও সুন্দর থাকবে।

পানি থেকে দূরে

অন্যান্য শাড়ির মতো জামদানি শাড়ি সাবান পাউডার আর পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। বরং জামদানিকে সবসময় নতুনের মতো রাখতে হলে পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। জামদানি তৈরির সময় যে মাড় ব্যবহার করা হয়, সেখানে পানি লাগলে সুতার বুনন আলগা হয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে করে জামদানি শাড়ি সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।

ডেমরার বিএসসিসিআই জামদানি পল্লী। ছবি: আনিসুর রহমান

কাঁটা ওয়াশ

যে কোনো দামি শাড়ির পরিচ্ছন্নতা বলতে অনেকের মাথায় ড্রাই ওয়াশের বিষয়টি আসে। কিন্তু জামদানি কোনোভাবেই ড্রাই ওয়াশ করা যাবে না। কারণ ড্রাই ওয়াশের পর জামদানি শাড়ি আয়রন করা হলে এতে শাড়ির বুনন নরম হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই জামদানি ধোয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে কাঁটা ওয়াশ৷ এমনকি পছন্দের শাড়িটি যদি নষ্ট হয়ে যায় বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তাহলেও কাঁটা ওয়াশে দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, যারা জামদানি তৈরি করে শুধুমাত্র তাদের কাছেই কাঁটা ওয়াশের জন্য দিতে হবে। কেননা কাঁটা ওয়াশ একমাত্র যারা জামদানি তৈরি করে তারাই করতে পারেন। তবে যদি কখনো জামদানি শাড়িতে দাগ লেগে যায়, তবে দাগ লাগার অংশটুকুতে ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে তারপর ড্রাই ওয়াশ করতে দিতে হবে। তবে এতে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

ছবি: জায়া

রোদে দেওয়া

অনেকদিন জামদানি শাড়ি আলমারির কোণে পড়ে থাকলে তাতে একটা আঁশটে গন্ধ তৈরি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মাঝে মাঝে শাড়ি রোদে শুকিয়ে নেওয়া ভালো। শুধু রোদে দিলেই হবে না, শাড়িটিকে উল্টিয়ে দিতে হবে যেন ২ দিকেই সমান রোদ লাগে। কোনো কারণে বৃষ্টির পানি পড়লে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেওয়া উচিত। এতে শাড়ি সুরক্ষিত থাকবে।

শাড়ির সঠিক ভাঁজ

রোদে দেওয়া, কাঁটা ওয়াশ সবই তো হলো, এবার জামদানিকে আলমারিতে তুলে রাখার পালা। জামদানি তুলে রাখার সময় শাড়ির ভাঁজটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণ শাড়িগুলোতে ৪ ভাঁজ করে মাঝখানে একটা ভাঁজ দিয়ে আরেক ভাঁজ ভেঙে রেখে দেই। কিন্তু  জামদানি কখনো এভাবে ভেঙে রাখা যাবে না। এমনকি শাড়ির মাঝখানে ভেঙে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখাও ঠিক না। যেহেতু জামদানি হাতে খুব মিহি বুনন করা, তাই বুননের একটি সুতা এদিক সেদিক হলেই শখের শাড়িটি ফেঁসে যেতে পারে। জামদানির প্রথম ২ ভাঁজ দিতে হবে নরমাল শাড়ির মতোই। এরপর একটা পাতালি ভাঁজ দিয়ে তারপর মাঝখানে ভেঙে একটা ভাঁজ দিয়ে, হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অথবা ২ পাশ থেকে ছোট ছোট ভাঁজ দিয়ে একটা আরেকটার ভেতরে দিয়ে দিতে হবে। জামদানি শাড়িকে কখনো অন্য শাড়ির নিচে রাখা যাবে না। আলমারিতে তুলে রাখার সময় সাদা কাগজের প্যাকেটে রেখে দিলে শাড়িতে যেমন ফাঙ্গাস পড়ে না, তেমনি সুরক্ষিতও থাকে। মাঝে মাঝে এই ভাঁজ পরিবর্তন করে রাখতে হবে। কারণ বেশি দিন এক ভাঁজে থাকলে শাড়িতে দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বেশি দিন ফেলে রাখবেন না

সাধারণত উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়া জামদানি শাড়ি পরা হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে, জামদানি যত বেশি পড়া হবে তত বেশি ভালো থাকবে। তাই মাঝে মাঝে জামদানি পরা উত্তম।

নতুন করে রঙ করানো

অনেক সময় দেখা যায়, জামদানি বেশি ব্যবহারের কারণে রঙ জ্বলে যায়। জামদানির রঙ নষ্ট হওয়া কিংবা দাগ লাগলে জামদানিতে নতুন ডিপ কালারের রঙ করে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একরঙা শাড়িগুলোতেই রঙ করা যায়। মাল্টিকালারের জামদানিতে রঙ করার উপায় নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

5h ago