ঈদ কেনাকাটায় দেশি পণ্যকে প্রাধান্য দেবেন যে কারণে

দেশি শাড়ি

ঈদের জন্য কেনাকাটার পরিকল্পনা যখন করা হয়, তখন মনে হয় মাত্র কয়েকটি জিনিসই কিনতে হবে। হয়ত সেটা নিজের জন্য নতুন পোশাক আর প্রিয়জনের জন্য কিছু উপহার।

কিন্তু একবার শপিং শুরু হতেই দেখা যায় দুহাত ভরে যাচ্ছে শপিং ব্যাগে আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খালি হচ্ছে মানিব্যাগ। তারপর একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, নতুন কেনা জিনিসের অর্ধেকই আমদানি করা পণ্য। এটা হয়তো ইচ্ছাকৃত নয়, কিন্তু কিনতে গেলে দেখা যায় না চাইতেও আমদানি পণ্যই কেনা হয়ে যাচ্ছে।

শপিং থেকে বিরতি নিয়ে এবার একটু ভাবুন। এ বছরটা কি বেশি বেশি দেশি পণ্য কেনা সম্ভব?

সম্ভবত এবারই দেশি পণ্য কেনার সঠিক সময়। স্থানীয় কারিগর ও শিল্পীদের তৈরি জিনিসপত্র আমাদের জীবনে যেমন নান্দনিকতা যোগ করে, পাশাপাশি ঘর ও পোশাকে নিজস্ব ঐতিহ্যের কিছু অংশ যুক্ত করার ফলে এক ধরনের পরিপূর্ণতার অনুভূতি ঘিরে ধরে। খুব সহজ কথায় বলতে গেলে, মানবিক স্পর্শ, স্বকীয়তা এবং দেশি পণ্যের ছোট ছোট খুঁতগুলোই এগুলোকে বরং নিখুঁত করে তোলে।

ফাস্ট ফ্যাশন এবং যন্ত্রে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পোশাক উৎপাদন শুরুর আগ পর্যন্ত এদেশের মানুষের পোশাকের জোগান দিতেন স্থানীয় কারিগররা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে স্থানীয় কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত পোশাক দিয়েই মিটেছে চাহিদা।

ঈদে দেশি পণ্য

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা জামদানি শাড়ি বা খাদি কাপড়ের তৈরি পাঞ্জাবি— এসব পোশাক রুচিশীল দেখানোর পাশাপাশি আমাদের ত্বককে শ্বাস নিতে সাহায্য করে। কারণ আমাদের আবহাওয়া, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে এগুলো খুব সহজেই মিশে যেতে পারে, যা কখনো কোনো আমদানি করা করা পোশাক থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।

পোশাকের পাশাপাশি আমাদের ঘরবাড়িও দেশি সামগ্রীতে সজ্জিত হলে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। চায়ের টেবিলের নিচে রংপুরের হাতে বোনা শতরঞ্জি, ঘরের কোনায় রোখা পাটের তৈরি ঝুড়ি কিংবা সোফার ওপর ফেলে রাখা নকশি কাঁথা বসার ঘরে বিশেষ নান্দনিকতা যোগ করে, ঘরে আনে আরামদায়ক উষ্ণতা। এই বিষয়গুলো আমদানি করা পণ্য থেকে কখনো পাওয়া যাবে না।

তাছাড়া যখন আপনি দেখবেন, সোফার ওপর পড়ে থাকা কুশন কভারের জটিল নকশাগুলো কোনো যন্ত্রের সাহায্যে নয়, দেশীয় কোনো সূচিশিল্পীর হাতের নিখুঁত কাজ, তখন রীতিমতো গর্ব অনুভব করবেন।

ঈদে দেশি পণ্য

তবে এর পরেও প্রায়ই আমরা অনেকটা সহজাতভাবেই আমদানি করা পণ্য কিনে ফেলি, মনে করি এতে অর্থের সঠিক ব্যবহার হলো। এটা ঠিক যে, ব্যাপকভাবে উৎপাদিত পণ্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী, কখনো কখনো সস্তাও বলে মনে হয়। কিন্তু গুণগত মান, স্বাতন্ত্র এবং স্বকীয়তার দিক থেকে এগুলো খুব কমই আলাদা হয়ে উঠতে পারে। আর আমরা যদি সবাই মিলে দেশীয় পণ্য কিনতে শুরু করি, তাহলে এগুলোরও উৎপাদন বাড়বে এবং পণ্যগুলো ধীরে ধীরে সহজলভ্য ও সুলভ হয়ে উঠবে। এই কেনা-বেচার চক্রের মাধ্যমে কারিগর ও ভোক্তা; দুই পক্ষই উপকৃত হবে।

প্রতিবার যখন আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কোনও পণ্য কিনি, আমরা কেবল সেটি ভোগই করি না, বরং এই কাজের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করি যে ছোট ব্যবসা ও স্থানীয় কারিগরদের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। প্রমাণ করি যে, হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আমরা সমর্থন করছি যেন এই কারিগরদের তাদের পূর্বপুরুষের পেশা ফেলে অন্য কাজে চলে যেতে না হয়। আমরা তাদেরও সহায়তা করছি যারা এখনও মন-প্রাণ দিয়ে আমাদের জন্য এসব পণ্য তৈরি করে চলেছেন।

তাই এই ঈদে আপনি যখন দোকানে ঘুরে ঘুরে দেখবেন কিংবা অনলাইনে পণ্য পছন্দ করবেন, তখন কিছু সময় দেশি পণ্যের জন্য বরাদ্দ রাখুন। বাজার ছেয়ে যাওয়া চুমকি বসানো শাড়ির চেয়ে একটি রাজশাহী সিল্কের শাড়ি নিঃসন্দেহে রুচিশীল ও অভিজাত। যেকোনো নামসর্বস্ব কারখানায় তৈরি হওয়া সিনথেটিক পাঞ্জাবির চেয়ে খাদি পাঞ্জাবি অনেক বেশি অর্থবহ। তাই ঈদের কেনাকাটার আগে আরেকবার ভাবুন, দেশি পণ্যকে সুযোগ দিন।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

1h ago