জিংকসমৃদ্ধ খাবার কেন প্রয়োজন, উৎস কী

জিংক সমৃদ্ধ খাবার
ছবি: সংগৃহীত

দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান জিংক। তবে বেশিরভাগ মানুষেরই দৈনন্দিন জিংকের চাহিদা পূরণ হয় না। কারণ জিংকের উপকারিতা এবং খাদ্য উৎস সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই।

চলুন আজ জেনে নিই জিংকসমৃদ্ধ খাবার কেন খাবেন এবং এর উৎস কী কী হতে পারে। জানিয়েছেন এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ আঞ্জুমান আরা শিমুল।

আঞ্জুমান আরা শিমুল জানান, জিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যা শরীরের নানা কার্যক্রমে প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত চাহিদা পূরণ না করলে শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে জিংকের ঘাটতি খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কম, অপর্যাপ্ত শোষণ, বর্ধিত ক্ষয়, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, উইলসনস ডিজিজ ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।

কেন খাবেন

জিংক শরীরের বিভিন্ন উপকার করে এবং এর অভাবে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়।

ত্বকের সমস্যা

জিংকের ঘাটতি ব্রণ, একজিমা, জেরোসিস (শুষ্ক খোসা ছাড়ানো ত্বক), সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা অ্যালোপেসিয়া (পাতলা এবং বিক্ষিপ্ত চুল) হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। এটি ক্ষত নিরাময়ে বাধা দেয়।

মুখের ক্ষত

জিংকের ঘাটতি ক্ষত, স্টোমাটাইটিস, অথবা জিহ্বার সাদা আবরণ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। মুখের কোণে ঘা সৃষ্টি করতে পারে।

দৃষ্টি, গন্ধ এবং স্বাদ

তীব্র জিংকের ঘাটতি ঘ্রাণশক্তিকে ব্যাহত করতে পারে এবং স্বাদকে ব্যাহত করতে পারে। তীব্র জিংকের ঘাটতি দৃষ্টিশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

জিংকের ঘাটতিযুক্ত ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে শ্বাসযন্ত্র, পাকস্থলী বা অন্যান্য সংক্রমণ, যেমন নিউমোনিয়া হতে পারে। জিংকের ঘাটতির কারণে রক্তের প্লাজমাতে প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা প্রভাবিত হয়।

ডায়রিয়া

জিংকের ঘাটতি ডায়রিয়ার প্রকোপ এবং তীব্রতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

ক্ষুধা

জিংকের অভাব ক্ষুধা হ্রাসের কারণ হতে পারে।

মানসিক ব্যাধি

মস্তিষ্কে জিংকের মাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে সিজোফ্রেনিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও অলসতা, বিরক্তি, বিষণ্নতা, শেখার আগ্রহ কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা বেড়ে যায়।

বৃদ্ধি

জিংকের ঘাটতি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে বিলম্ব ঘটাতে পারে।

গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায় জিংকের ঘাটতি মা এবং ভ্রূণ উভয়ের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

টেস্টোস্টেরন উৎপাদন

টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের জন্য জিংকের প্রয়োজন। জিংকের অভাব টেস্টোস্টেরনের সঞ্চালন হ্রাস করতে পারে, যা যৌন অপরিপক্কতা, হাইপোগোনাডিজম এবং বিলম্বিত বয়ঃসন্ধির কারণ।

পর্যাপ্ত জিংক গ্রহণ করলে এসব রোগের ঝুঁকি কমে যায় এবং শরীরের সামগ্রিক উন্নতি ঘটে।

জিংকসমৃদ্ধ খাদ্যের উৎস

জিংকসমৃদ্ধ খাবারের উৎস দুই ভাগে ভাগ করা যায়- প্রাণিজ উৎস ও উদ্ভিজ্জ উৎস।

প্রাণিজ উৎস

মাংস

মুরগি, গরু, ছাগলের মাংসে প্রচুর পরিমাণে জিংক থাকে। তবে খুব বেশি রেডমিট খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো নয়। তাই মেপে খান। খেলেও প্রসেস করা মাংস খাবেন না।

সামুদ্রিক মাছ

কম ক্যালরি অথচ বেশি পরিমাণে জিংক আছে এমন খাবার খেতে হলে কাঁকড়া, অয়েস্টারের মতো খাবার খেতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক মাছেও জিংক থাকে। তবে অনেকের নানা রকম অ্যালার্জি থাকে সামুদ্রিক খাবারে। বিশেষ করে কাঁকড়ায়।

দুধ-ডিম

ডিমের মতো পুষ্টিকর খাবার খুব কম হয়। দিনে একটা করে সেদ্ধ ডিম খেলে জিংক ছাড়াও নানা রকম পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। দুগ্ধজাত খাবারেও পাবেন জিংক।

উদ্ভিজ্জ উৎস

শস্যজাতীয় খাদ্য

ব্রাউন রাইস, গম, লাল চিড়া, ওটস, ভুট্টা, কুইনোয়া, বার্লি ইত্যাদি জিংকসমৃদ্ধ খাবার।

ডালজাতীয় খাদ্য

রাজমা, কাঁচা মুগ, ছোলা, কাবুলি ছোলার মতো শস্য খেলে প্রচুর পরিমাণে জিংক পাওয়া যায়। তবে এগুলি কাঁচা খেলে পেট ফুলে যাওয়ার একটা সমস্যা দেখা যায়। তাই সেদ্ধ করে বা পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন।

বীজ জাতীয় খাদ্য

ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড, কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখী ফুলের বীজে থেকে জিংক পাওয়া যায়। এগুলো তেল ছাড়া ভেজে, সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে বা গুঁড়ো করে আটা মাখার সময় মিশিয়ে খেতে পারেন।

কিছু সবজি

পালং শাক, মাশরুম, বিনের মতো কিছু সবজিতে অল্প পরিমাণে জিংক থাকে। তাই নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।

দৈনন্দিন চাহিদা

জিংকের দৈনন্দিন চাহিদা বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক অবস্থার (যেমন গর্ভাবস্থা) ওপর নির্ভর করে।

নিচে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য পুষ্টি নির্দেশিকা অনুসারে জিঙ্কের প্রস্তাবিত দৈনিক চাহিদা দেওয়া হলো:

পুরুষদের জন্য

প্রাপ্তবয়স্ক (১৯ বছর ও তদূর্ধ্ব): ১১ মিলিগ্রাম

নারীদের জন্য

প্রাপ্তবয়স্ক (১৯ বছর ও তদূর্ধ্ব): ৮ মিলিগ্রাম

অন্তঃসত্ত্বা নারী: ১১ মিলিগ্রাম

দুধ পান করানো মায়েরা (ল্যাকটেটিং): ১২ মিলিগ্রাম/দিন

শিশুদের জন্য

১–৩ বছর: ৩ মিলিগ্রাম

৪–৮ বছর: ৫ মিলিগ্রাম

৯–১৩ বছর: ৮ মিলিগ্রাম

১৪–১৮ বছর (ছেলে): ১১ মিলিগ্রাম/দিন

১৪–১৮ বছর (মেয়ে): ৯ মিলিগ্রাম/দিন

অতিরিক্ত গ্রহণে সতর্কতা

দীর্ঘদিন অতিরিক্ত জিংক (প্রতিদিন ৪০ মি.গ্রা. বা তার বেশি) গ্রহণ করলে কপার শোষণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus on july charter 2025

Yunus rules out referendum over July Charter

Chief adviser insists party agreement key to polls; vows justice, reform ahead of election

11h ago