কিডনিতে পাথর কেন হয়, প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

কিডনিতে পাথরের সমস্যার কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু সময়মতো এ সমস্যার চিকিৎসা করা না হলে তা ব্যথা ও মারাত্মক শারীরিক জটিলতার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

কিডনিতে পাথর কেন হয়, আর এর চিকিৎসাই বা কী—সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান।

কিডনিতে পাথর কেন হয়

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কিডনিতে পাথর হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ অজানা। বিভিন্ন রাসায়নিক গঠনের ভিত্তিতে কিডনিতে পাথরের প্রধানত ৩টি ধরন রয়েছে। যেমন—ইউরিক অ্যাসিড পাথর, ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর ও স্ট্রুভাইট পাথর। 

ট্রিপল ফসফেট অর্থাৎ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট—এগুলোর সংমিশ্রণে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়।

কিডনিতে যেসব কারণে পাথর হতে পারে—

১. যদি কোনো কারণে কিডনির রাস্তা বাধাপ্রাপ্ত হয় বা প্রস্রাবের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়

২. শরীরে ক্যালসিয়াম বেড়ে গেলে, যেমন—যাদের প্যারাথাইরয়েড হরমোন আছে তাদের শরীরে প্যারাথাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে ক্যালসিয়ামও বেড়ে যায়। আর শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে কিডনিতে পাথর হতে পারে।

৩. শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।

৪. মূত্রথলিতে কোনো সময় যদি প্রস্রাব জমা হয়ে থাকে তাহলে ইনফেকশন থেকে পাথর হতে পারে।

৫. শরীরের অন্যান্য মেটাবলিক বা বিপাকীয় পরিবর্তনের জন্য কিডনিতে পাথর হতে পারে।

লক্ষণ

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কিডনিতে পাথর হলে এর কিছু লক্ষণ দেখা যায়। আবার অনেক সময় কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তবে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো-

১. কিডনিতে পাথর হলে ব্যথা অনুভূত হয়, পাথর কোথায় হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যথা বোঝা যায়। শরীরের দুই পাশে কিডনি থাকে, যে পাশে পাথর হয় বা কোমরে সবসময় মৃদু ব্যথা অনুভূত হওয়া। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা, পাহাড়ে ওঠা কিংবা অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ করলে ব্যথা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

২. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ।

৩. কিডনি ফুলে যেতে পারে, পেটের মধ্যে চাকা অনুভূত হওয়া।

৪. দুই কিডনিতে বড় আকারের পাথর হলে কিডনি ফেইলিউর হতে পারে।

৫. কিডনিতে পুঁজ হতে পারে

কিছু পাথর আছে যেগুলোর কারণে কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না। অন্য কোনো কারণে পরীক্ষা করতে গিয়ে হয়ত শনাক্ত হয় কিডনিতে পাথর হয়েছে।

এছাড়া পাথর আকারে যখন ছোট হয় তখন কিডনির রাস্তা বা ইউরেটারে চলে আসতে পারে। পাথর ইউরেটারে চলে আসলে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেমন—তীব্র ব্যথা, সাধারণত দেখা যায় এই ব্যথা কোমর থেকে শুরু হয় এবং পেটের নিচের দিকে চলে যায়। 

পাথর ইউরেটার বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে কিডনি ফুলে যেতে পারে, কিডনিতে পুঁজ হতে পারে, কিডনি অকেজো করে দিতে পারে।

পাথর যদি মূত্রথলিতে হয় তাহলে ঘনঘন প্রস্রাব হবে। অল্প একটু প্রস্রাব করার পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে আবার শুরু হতে পারে অর্থাৎ প্রস্রাবে অসুবিধা হওয়া। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।

আর পাথর যদি প্রস্রাবের রাস্তায় আটকে যায়, তাহলে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার মূত্রথলিতে পাথর হওয়ার কারণেও প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
 
চিকিৎসা

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কিডনির পাথরের আকার যখন বড় হয়ে যায় তখন সেটি রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায়, বারবার মূত্রনালির সংক্রমণ হচ্ছে, ভালো হচ্ছে না। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় কিডনিতে পাথর হয়েছে। 

পাথর যদি কিডনির রাস্তা বন্ধ করে দেয়, পাথর যদি আকারে বড় হয়, ব্যথা থাকে তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা না করলে ধীরে ধীরে কিডনি অকেজো বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

দুই পাশে বা একটি কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণে যদি ইউরেটার বন্ধ করে দেয়, তাহলে রোগীকে অনেক সময় ডায়ালাইসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়।

কিডনিতে পাথরের আকার, অবস্থান, ধরনের ওপর ভিত্তির করে চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে।

কিডনিতে পাথরের আকার যদি ৫ মিলিমিটারের কম হয় তাহলে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে পাথর বের হয়ে যায়। যদি পাথরের আকার ৫ থেকে ৬ মিলিমিটার পর্যন্ত হয় তাহলে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে পাথর বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৪০-৫০ শতাংশ। 

পাথরের আকার ৭ মিলিমিটারের বেশি হলে সেটি ওষুধ সেবনে বের করে আনা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে পাথর অপসারণে অস্ত্রোপচার করতে হয়।

কিডনিতে পাথর বড় হলে অস্ত্রোপচার করা হয় বিভিন্ন পদ্ধতিতে। কিডনিতে ছোট ছিদ্র করে লেজার বা যন্ত্রের মাধ্যমে পাথরটাকে ভেঙে গুড়ো করে বের করে আনা হয়। পাথর যদি ইউরেটারে হয়, মূত্রথলীতে হয় তাহলে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে পাথর বের করে আনা হয়।

প্রতিরোধ

১. নিয়মিত পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে। শরীরের জন্য কম পানি পান করা বা প্রয়োজনের বেশি পানি পান করা খারাপ।

২. প্রস্রাব কখনো আটকে রাখা যাবে না।

৩. যাদের পাথর হয় বা পাথর হওয়ার ঝুঁকি আছে, তারা মাটির নিচে হয় এমন সবজি কম খেতে হবে। এছাড়া ওল, কচু, মূলা, আলু, সিমের বিচি, মটর শুঁটি, মসুর ডাল, গরুর মাংস, খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছ এগুলো পরিমিত খেতে হবে।

৪. ক্যাসলিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে, তবে দুধ বা দুধের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি কম খেতে হবে।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা-চলার অভ্যাস করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

20h ago