প্রায় ২০০ কোটির রাজস্ব ফাঁকি মামলা, পরোয়ানার ৩৩ মাসেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ

২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাবনায় একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন এসএম আসিফ শামস। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও আড়াই বছরের বেশি সময়েও তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে এস এম আসিফ প্রকাশ্যে তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন, এমনকি স্থানীয় নির্বাচনে অন্যদের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসিফ শামস আদালতে হাজির হয়ে কিছু নথি দাখিলের পর তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে নেন ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত।

গতকাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে নেন ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত। ছবি: স্টার

তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার একটি কপি ২০২২ সালের ২৩ মে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছিল।

গত বুধবার বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই থানায় যোগদানের পর (২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর) আমি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে জানতে পারি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তখন আমি তাকে মৌখিকভাবে বলি পাওনা টাকা পরিশোধ করতে।

২০২১ সালে এসএম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ছবি: স্টার

'তার বাবা বর্তমান সংসদ সদস্য ও সংসদে ডেপুটি স্পিকার। তিনি বর্তমান পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাকে গ্রেপ্তার করব…আমার কি সাহস আছে? আমি তাকে শুধু মৌখিকভাবে কয়েকবার বলেছি,' বলেন তিনি।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এই মামলায় আরও আসামি করা হয় ভিশন টেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইরিন ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম, পরিচালক রাসেল মির্জা এবং শেয়ারহোল্ডার জিয়াউর রহমানকে।

১৬১তম কমিশন সভায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। একইসঙ্গে লাইসেন্স বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আদালত ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আসিফ, আইরিন, শরিফুল ও রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এরপর থেকে ওই চারজন পলাতক রয়েছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আসিফ ২০২২ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মসূচি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিয়েছেন।

'অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন' নামের একটি ফেসবুক পেজে দেখা যায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সময় থেকে গতকাল পর্যন্ত আসিফ অন্তত ১২০ বার লাইভে এসেছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন আসিফ শামস।

গত ৬ মে বেড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে ভোট চেয়েছিলেন তিনি এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবার প্রচারণায়ও তিনি অংশ নেন।

এসএম আসিফ শামস (বামে, সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত) ও তার বাবা জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। গত ২৮ জুন পাবনার বেড়া উপজেলায় একটি বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে।

বিটিআরসির নথি অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল লাইসেন্স পায় ভিশন টেল লিমিটেড।

বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব ভাগাভাগি ও বার্ষিক লাইসেন্স ফি থেকে উদ্ভূত পাওনা আদায়ের জন্য মামলাটি করা হয়েছিল, যা এখন সুদসহ ২৩৫ কোটি টাকার বেশি হয়ে গেছে।

শুনানির পরে আদালতে কর্মরত একজন বলেন, এই মামলার শেষ শুনানি ছিল ২৬ জুন, যেহেতু গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি, তাই আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ২৫ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন।

জানতে চাইলে গতকাল আসিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে ২০১৩ সালে ভিশন টেল লিমিটেড থেকে বের হয়ে আসি। মামলা তো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আদালতের নোটিশ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে আমাকে আগে জানানো হয় নাই।'

তিনি বলেন, 'আজ (বৃহস্পতিবার) আমি আদালতে হাজির হয়েছি এবং সমস্যার সমাধান হয়েছে।'

'শিগগিরই বেড়ায় ফিরব,' জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে বেড়া থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি।

২০১৫ সালের ১৬ জুন ভিশন টেল লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, আসিফ গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বিদেশ চলে গেছেন। তবে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে একটি ভিডিও ক্লিপ রয়েছে, যেখানে আসিফকে বুধবার রাজধানীর রমনা এলাকায় একটি গাড়ির ভেতর দেখা গেছে।

তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, মেয়র আসিফ সর্বশেষ গত ২৮ জুন তার বেড়া অফিসে কাজ করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Unveil roadmap or it’ll be hard to cooperate

The BNP yesterday expressed disappointment over the absence of a clear roadmap for the upcoming national election, despite the demand for one made during its recent meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus.

7h ago