ই-টিকিট আছে, ই-টিকিট নেই

বিকল্প পরিবহনের একটি বাসে ভাড়া তুলছেন এর সুপারভাইজার। ছবি: সুমন আলী/স্টার

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণা অনুসারে আজ রোববার থেকে ঢাকার মিরপুর অঞ্চলের ৩০টি কোম্পানির বাসে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও  কয়েকটি কোম্পানির বাসে তা দেখা যায়নি।

এসব বাসে কবে নাগাদ ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি মালিকপক্ষ ও এর স্টাফরা।

মিরপুর অঞ্চলের বাসগুলোতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু হলো কিনা দেখতে আজ সকালে ফার্মগেট থেকে মিরপুর-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন এই প্রতিবেদক। গন্তব্য আগারগাঁও। বাসের সুপারভাইজার ভাড়া চান ১০ টাকা। ই-টিকিট চাইলে সুপারভাইজার জানান, তাদের বাসে এখনো ই-টিকিট চালু হয়নি।

কবে চালু হবে জানতে চাইলে সুপারভাইজার তাজুল ইসলাম বলেন, 'আগামী ২-১ দিনের মধ্যে চালু হবে আশা করছি।'

এ অবস্থায় ১০ টাকা দিয়ে খামারবাড়ি মোড়ে নেমে অন্য চিত্র চোখে পড়ে।

দেখা যায়, এক ব্যক্তি বাসের পেছনে ছুটছেন আর গালিগালাজ করছেন। বাসটি ওই ব্যক্তিকে না নিয়ে দ্রুত চলে যায়। পরে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি মিরপুর সুপার লিংক পরিবহনের স্টাফ। নাম মো. রাহাত। কী হয়েছিল জানতে চাইলে রাহাত বলেন, 'আমাদের কোম্পানি ২ মাস ধরে ই-টিকিট চালু করেছে। নিয়ম হলো নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া লোক তোলা যাবে না। বাসে ওঠার আগে অবশ্যই টিকিট নিয়ে উঠতে হবে। বাসে ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কিছু বাসের চালক আর সুপারভাইজার যেখানে-সেখানে লোক ওঠান। এই ভাড়া মালিক পায় না। তারা নিজেরাই নেন।'

বাসের পেছনে দৌঁড়ানোর কারণ সম্পর্কে রাহাত বলেন, 'সুপাইরভাইজার লোক তুলেছে। তাকে ধরার জন্য দৌঁড়াচ্ছিলাম। সামনের যে স্টপেজ আছে সেখানে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছি এবং বলেছি, বাসের লোক গুনতে।'

এবার এখান থেকে খাজা বাবা পরিবহনের একটি বাসে উঠে দেখা যায়, সুপারভাইজার আগের নিয়মেই ভাড়া কাটছেন। ই-টিকিটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের বাসে এখনো ই-টিকিট চালু হয়নি। কবে চালু হবে কোম্পানি জানে।'

খাজাবাবা পরিবহনের এই বাসেও চালু হয়নি ই-টিকিট। ছবি: সুমন আলী/স্টার

এ সময় পরিচয় দিয়ে সুপারভাইজারের নাম জানতে চাইলে তিনি তা বলতে রাজি হননি। এছাড়া তখন ভাড়া নেওয়া বন্ধ করে টাকাগুলো পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন তিনি।

রাজধানীতে অতিরিক্ত বাসভাড়া আদায় নিয়ে বিভিন্ন সময় যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিরসনে ই-টিকিটিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শুরুতে গত ২২ সেপ্টেম্বর সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে ৪টি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়। এতে সরকার নির্ধারিত হারে একজন যাত্রী যত কিলোমিটার যাবেন, তিনি ঠিক তত দূরত্বের জন্যই ভাড়া দেওয়ার নিয়ম আছে।

আজ সকালে মিরপুর-মহাখালী-গুলশান-বাড্ডা-রামপুরা-বনশ্রী রুটে চলাচলকারী আলিফ পরিবহনেও দেখা যায়, তারা ই-টিকিট চালু করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলিফ পরিবহনের এক সুপারভাইজার বলেন, 'ই-টিকিট সম্পর্কে আমাদের এখনো কিছু বলা হয়নি। মেশিনও দেওয়া হয়নি। কবে দেওয়া হবে এই বিষয়ে কিছু জানি না।'

ই-টিকিটের মেশিন চালাতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখনো জানি না। পেলে শিখে নেব।'

এর বাইরে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচল করা শিকড় পরিবহনের অন্তত ৫টি বাসে ই-টিকিটের ব্যবহার দেখা যায়নি।

তবে তানজিল পরিবহন, আয়াত পরিবহন, বিকল্প পরিবহনের কয়েকটি বাসে ই-টিকিট ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

আয়াত পরিবহনে করে কমলাপুর থেকে মিরপুর যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার আলী। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ই-টিকিটের সুবিধা হলো ভাড়া নিয়ে কোনো ঝামেলা করতে হয় না। তবে সমস্যা হলো এক স্টপেজ পার হয়ে অল্প একটু সামনে গেলেই আরেক স্টপেজ পর্যন্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে।'

আগে থেকেই ই-টিকিট চালু করা মিরপুর সুপার লিংক পরিবহনে নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একুশ তাপাদার। ই-টিকিটিং ব্যবস্থার সুফল সম্পর্কে তিনি বলেন, 'স্টপেজে ভাড়া দিয়ে বাসে উঠি। বাস সাধারণত স্টপেজ ছাড়া দাঁড়ায় না। এ জন্য অনেকটা সময় বেঁচে যায়। ভাড়া নিয়ে তেমন একটা ঝামেলা হয় না। তবে অনেক সময় হেল্পাররা যেখানে-সেখানে যাত্রী তোলেন। এটি বন্ধ করতে পারলে অবশ্যই ই-টিকিট একটি ভালো উদ্যোগ। তবে বাসের মধ্যেই যদি ই-টিকিট দেওয়া হয় তাহলে বিষয়টি তেমন ফলপ্রসূ হবে না।'

মিরপুর সুপার লিংক পরিবহনের বাসগুলোতে আগে থেকেই চালু আছে ই-টিকিট। ছবি: সুমন আলী/স্টার

ই-টিকিট চালু না করা প্রসঙ্গে বিহঙ্গ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন স্বপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণ শেষ হলেই ই-টিকিট চালু করবো।'

কবে নাগাদ এটি চালু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

তানজিল পরিবহনের পরিচালক সারাফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা আমাদের প্রায় সব বাসেই ই-টিকিট চালু করেছি। তবে অল্প কিছু বাসে বাকি আছে। স্টাফরা লেখাপড়া তেমন না জানায় মেশিন চালাতে একটু সমস্যা হচ্ছে।'

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিরপুর রুটের সব পরিবহনের ই-টিকিট চালু করার কথা। কেন সবাই চালু করেনি সেটা দেখছি। হয়তো কেউ কেউ মেশিন দেরিতে পাওয়ায় এটি চালু করতে পারেনি। সবাই যেন দ্রুত এটা চালু করে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ আজ থেকে মিরপুর রুটের ৩০টি কোম্পানির বাসের ই-টিকিটিং চালুর ঘোষণা দেন।

তার ঘোষণা অনুসারে, আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় ঢাকায় মোট ৬০টি কোম্পানির বাস চলাচল করবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এর সংখ্যা হবে ৯৭টি।

অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা ও আশাপাশের এলাকায় চলাচলকারী ৫ হাজার ৬৫০টি বাসের সবগুলোই ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আসার কথা।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Costs Of Autonomy Loss of Central Bank

Bangladesh Bank’s lost autonomy has a hefty price

Economists blame rising bad debt, soaring prices and illicit fund flows on central bank’s waning independence

12h ago