গোলটেবিল বৈঠক

বাল্য বিয়ে ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধে সামাজিক প্রথা ভাঙতে হবে

দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ইমপ্যাক্ট অব সোশ্যাল নর্মস প্রোগ্রামিং শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। ছবি: প্রবীর দাশ

সমাজে বাল্য বিয়ে ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধে শুধু বাবা-মায়ের ভূমিকাই নয়, বরং সামাজিক রীতিনীতিও প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে। এটি একটি মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। আজ এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এই সমস্যা সমাধানে তারা দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নেওয়ার পাশাপাশি সমাজের প্রচলিত প্রথা ভাঙার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

রাজধানীতে দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ইমপ্যাক্ট অব সোশ্যাল নর্মস প্রোগ্রামিং শীর্ষক এক গোলটেবিল সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। দ্য ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় কেয়ার বাংলাদেশ এই সভা আয়োজন করে।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিং ও দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা।

কেয়ার বাংলাদেশ তাদের চলমান 'টিপিং পয়েন্ট' এর তৃতীয় পর্যায়ের উদ্যোগের ফলাফল সভায় তুলে ধরে।

কেয়ার বাংলাদেশের রিসার্চ, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর মাহমুদুর রহমান খান বলেন, তাদের নেওয়া ৩৬-৪০টি সেশনে অংশগ্রহণকারী কিশোরীদের মধ্যে বাল্য বিয়ের ঝুঁকি প্রায় ৬৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বাল্য বিয়ে রোধে বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও এর আগে এত বড় সাফল্য পাওয়া যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ৫১টি গ্রামে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়।

সেখানে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বেসলাইন ডেটা সংগ্রহ করা হয় এবং ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এন্ডলাইন ডেটা সংগ্রহ করা হয়।

কিশোর-কিশোরী, তাদের বাবা-মা, কমিউনিটির সদস্য, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সভায় ইউএনএফপিএর প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট-অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ মুহাম্মদ মুনির হুসাইন প্রথাগত কর্মসূচি পরিকল্পনার পরিবর্তে উদ্ভাবনী উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, গত ৪০-৫০ বছর ধরে আমরা সামাজিক প্রথার কথা বলছি। প্রথা স্থির নয়; এটি গতিশীল এবং পরিবর্তনযোগ্য। চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে, সামাজিক প্রথা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ব্র্যাকের নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ উদ্যোগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, ক্রমাগত চেষ্টার মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতি বিরুদ্ধে কাজ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এর আগে স্যালাইন তৈরি করা শুরু করা থেকে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। সমাজ যখন উপকৃত হয়, তখন তারা সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।

সুইডেন দূতাবাসের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও লিঙ্গ সমতা বিষয়ক প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট পাওলা কাস্ত্রো নাইদারস্টাম বলেন, 'বাল্যবিবাহ জেন্ডার সহিংসতার একটি রূপ। এটি কিশোরীদের মানবাধিকারের লঙ্ঘন।'

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার ডলি বলেন, দেশের নিম্ন আয়ের এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সফট লোন চালু করতে পারে সরকার।

তিনি বলেন, আমরা যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে ঝরে পড়া ও বাল্য বিয়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিকল্পনা পরিচালক এম এ আখের বলেন, সরকার কিশোর-কিশোরীদের কেন্দ্র করে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেয়ার বাংলাদেশের উইমেন অ্যান্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্টের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রওনক জাহান, ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা তাহেরা জাবিন প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

2h ago