বন্যায় ক্ষতি

বান্দরবান-লামা সড়কে যোগাযোগ বন্ধ ১৬ দিন

ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় বান্দরবান -লামা সড়কের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছবিটি গত রোববার তোলা হয়েছে। ছবি: মংসিং হাই মারমা/ স্টার

বান্দরবানে ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় অভ্যন্তরীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় ধস ও সড়কের দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত ৭ আগস্ট থেকে বান্দরবান-সুয়ালক-লামা অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৭ দিনের টানা অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বান্দরবান জেলা সদরের সঙ্গে জেলার প্রায় সবগুলো উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ক্ষয়ক্ষতি হয়।

পাহাড় ধস, সড়কের দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে মাঝে বড় ফাটল, রাস্তার একপাশ ধসে যাওয়ার মতো দৃশ্য চোখে পড়বে জেলার লামা -সুয়ালক, হলুদিয়া-ভাগ্যকুল, থানচি-বলিপাড়া, রুমা-পলিকা পাড়া, আলীকদম-দোছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি-আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি- তুম্ব্রু, গাজালিয়া-ফাইতং, রোয়াংছড়ি, কালাঘাটা-তারাছা, লোইরাগইং, খানসামা, বাগমারা সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে।

গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বান্দরবান-লামা অভ্যন্তরীণ ৫৬ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কে বাস চলাচল না করলেও মোটর সাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, জিপ এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। তবে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ।  

টংকাবতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মায়াং ম্রো প্রদীপ জানান, বান্দরবান জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ইউনিয়ন। টানা ৭ দিন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে টংকাবতী ইউনিয়নে পাহাড় ধস হয়েছে। পাহাড় ধসে দুজন মারা গেছে, সড়কের উপর পাহাড় ধসে রাস্তা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া জুম চাষের ধান খেত, ফলের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নিজ উদ্যোগে সড়ক থেকে মাটির স্তুপ সরানো হলেও এখনো টংকাবতী ইউনিয়নে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি বলে জানান তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবিন মো. ইয়াসির আরাফাত জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ২২টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার মেরামত করতে খরচ হবে প্রায় ৪২ কোটি টাকা।

সরেজমিনে বান্দরবান থেকে লামা উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের টংকাবতী, রোয়াংছড়ি, কালাঘাটা, লিরাগাও, খানসামা, বাঘমারাসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের ক্ষতির বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানায় চলতি মাসের দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা না হলে যাতায়াতের অসুবিধার পাশাপাশি কৃষিপণ্য পরিবহনসহ অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যের ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

রোয়াংছড়ি উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা চহ্লা মং মারমা জানান, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার কয়েকটি ব্রিজ, কালভার্টসহ বেশ কয়েকটি ইট ও পিচের রাস্তা, বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ার কারণে খুবই অসুবিধায় আছেন তারা।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলাম মজুমদার জানান, গত ৩৮ বছরে এমন বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। বিগত সময়ের কোনো বন্যায় এত ক্ষয়ক্ষতি হয়নি রাস্তাঘাটের।

তিনি বলেন ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে বন্যার সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হয়েছে, তা পর্যালোচনায় দেখা যায় ইনভেনটরিভুক্ত ৯০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা মেরামতের জন্য ১৫০ কোটি টাকা লাগবে। এছাড়াও এলজিইডির নিজস্ব কার্যালয় ও পরিক্ষণ ল্যাব, গাড়ি ও স্থাপনারও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো।

খুব দ্রুততম সময়ে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা আবারো স্বাভাবিক করা হবে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

19h ago