বর্ষায় দেশীয় বাঁশের ফাঁদের চাহিদা বাড়ছে, কমছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার

এই 'চাই' সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বর্ষা মৌসুমে। ছবি: স্টার

বর্ষা মৌসুমে বাগেরহাটের গ্রামাঞ্চলে মাছ ধরার ঐতিহ্যবাহী দেশীয় বাঁশের তৈরি ফাঁদের চাহিদা বেড়েছে। মৎস্য বিভাগের তৎপরতায় কমতে শুরু করেছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার।

বর্ষার আগমনে বাগেরহাটের বিভিন্ন বিল, জলাশয় ও খালগুলোতে তরুণ থেকে বৃদ্ধ সবাইকে মাছ ধরতে দেখা যাচ্ছে।

এই সময়টাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বাঁশ দিয়ে তৈরি 'চাই' ফাঁদের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই ফাঁদটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ হিসেবে পরিচিত।

নিষিদ্ধ জালের তুলনায় 'চাই' ফাঁদ মাছ বেছে আটকায়, যেখানে ছোট মাছ ফাঁদের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যায় এবং বড় ও পরিপক্ক মাছগুলো ফাঁদে আটকা পড়ে।

ফলে এটি জলাশয়গুলোর মাছের প্রজনন ও বংশ বিস্তারে বিরূপ প্রভাব ফেলে না।

এই 'চাই' সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বর্ষা মৌসুমে। বৃষ্টি শুরুর আগে বাগেরহাটের কচুয়ার কারিগরের বাড়ি থেকে ও হাটে প্রতিদিন ২০০-৩০০টি 'চাই' বিক্রি হতো। গত কিছুদিনের বৃষ্টির মধ্যে বিক্রি বেড়েছে। প্রতিদিন এখন ৫০০-৬০০টি 'চাই' বিক্রি হচ্ছে।

কচুয়ার সাংদিয়া গ্রামের কারিগর বাসু দাস ও কৃষ্ণ দাস প্রতিটি ফাঁদ ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান।

কারিগর বাসু দাস বলেন, 'এই "চাই" বা ফাঁদ বানানো আমাদের পৈতৃক পেশা। এটি শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার সময় এই ফাঁদ বিক্রি করে যে আয় করি, তা সারা বছর আমার পরিবারকে সহায়তা করে।'

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় 'চাই'। ছবি: স্টার

বাধাল বাজারের 'চাই' ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার বাধাল, মোরেলগঞ্জ, চিতলমারী ও অন্যান্য স্থান থেকে লোকজন এই ফাঁদ কিনতে আসেন। আমরা ২৫০-৩০০ টাকায় প্রতিটি চাই বিক্রি করি। এখন চাহিদা বাড়ছে।'

বাঁশের 'চাই' বিক্রেতারা জানান, কচুয়ার সাংদিয়া, আফরা, কলমিবুনিয়া, গোপালপুর, মোরেলগঞ্জ ও চিতলমারীর বিল এলাকা, পিরোজপুরের কদমতলা এলাকায় মাছ ধরা হয়।

জেলেরা সাধারণত বিকেলে এই 'চাই' বা 'ফাঁদ' পাতেন। তোলেন পরের দিন সকালে। টেংরা, পুঁটি, চিংড়ি, পারসেসহ নানা ধরনের দেশি মাছ ধরা পড়ে ফাঁদে।  

কচুয়া উপজেলার আফরা গ্রামের জেলে রেজাউল শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্ষায় জলাশয়গুলো মাছে ভরপুর থাকে। একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট মাছ ধরার উপযোগী "চাই"। এগুলো ব্যবহার করে মাছ ধরা সুবিধাজনক, কারণ ছোট মাছগুলোকে বের হয়ে যেতে দেয় যেগুলো বড় হলে পরের মৌসুমে ধরা যাবে।'

জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবৈধ জালের ব্যবহারের কারণে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার ব্যাপক হারে কমছিল। তবে "চাই" ফাঁদ একটি ঐতিহ্যবাহী এবং টেকসই উপকরণ যা মাছের ছোট পোনাকে বেরিয়ে যেতে দেয় এবং মাছের বংশ বিস্তারে সহায়ক। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা এখন এটার ব্যবহার করছেন।'

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

19h ago