জাপানে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা: ৩৭৯ যাত্রীর বেঁচে যাওয়ার নেপথ্যে ক্রুদের দক্ষতা

উড়োজাহাজে আগুন
জাপান কোস্টগার্ডের উড়োজাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে জাপান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জাপানের হানেদা বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল জাপান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ। সে সময় রানওয়েতে পার্ক করা আরেকটি উড়োজাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় উড়োজাহাজটির। 

এতে দুটি উড়োজাহাজেই আগুন ধরে যায়। আগুনসহ জাপান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটি রানওয়েতে অবতরণ করে।

এয়ারবাস এ-৩৫০ উড়োজাহাজে সে সময় ৩৭৯ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন ছিল শিশু। তবে তাদের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। 

কীভাবে তা সম্ভব হলো, এ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

কেউ কেউ ধর্মীয় দিক বিবেচনা করছেন, অনেকেই আবার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন। আবার কেউ বলছেন এটা 'জাস্ট অ্যা মিরাকল।'

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া বিবিসির সাংবাদিক থিও লেগেটের মতে, যাত্রীদের প্রাণ রক্ষায় সাহায্য করেছে উড়োজাহাজের আধুনিক প্রযুক্তি।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার পক্ষে মূল যুক্তি ছিল, আগুন লাগার পরেও উড়োজাহাজটির মূল কাঠামোটি সুরক্ষিত ছিল। এর ফলে ৩৭৯ জন যাত্রী ও ক্রুকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

তাদের মতে, এ-৩৫০ উড়োজাহাজ কার্বন ফাইবারের মতো নতুন শক্তিশালী উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা দীর্ঘ সময় আগুন সহ্য করতে পারে। এ সময়ের মধ্যে যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারে। 

উড়োজাহাজের কাঠামো ডিজাইন করার সময় চ্যালেঞ্জ হলো, এর ওজন কমানো ও শক্তি বজায় রাখা। এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন উড়োজাহাজের অর্ধেক জরুরি দরজা খোলা রেখেই ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে সব যাত্রীকে সরিয়ে নেওয়া যায়।

তবে যে যুক্তি বা ব্যাখ্যা দেওয়া হোক না কেন, উড়োজাহাজের যাত্রীদের বাঁচাতে জাপান এয়ারলাইনসের পাইলট ও ক্রুরা যে তৎপরতা চালিয়েছেন তা অস্বীকার কোনো উপায় নেই। এখানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল যাত্রীদের সহযোগিতা।

অর্থাৎ, এ-৩৫০ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় যাত্রীদের বেঁচে যাওয়ার পক্ষে যাত্রীদের সহযোগিতা এবং কেবিন ক্রুদের দক্ষতার যুক্তিটিই সবচেয়ে জোরালো ও গ্রহণযোগ্য।

জাপানিদের বাল্যকাল থেকেই সামাজিক শিক্ষার ট্রেনিং দেওয়া হয়। নিজেদের মধ্যে লিডারশিপ তৈরি করা, লিডারের নির্দেশ মেনে চলার শিক্ষাটা ছোটবেলা থেকেই তারা রপ্ত করে থাকে।

দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজের একজন যাত্রীও নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত সিট থেকে উঠে আগে বের হওয়ার চেষ্টা করেননি। নির্দেশনা মেনে চলেছেন। অর্থাৎ, ছোটবেলার শিক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

ক্রুরা দুর্ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ প্রথম কয়েক মিনিটে যাত্রীদের নিরাপদে বের করতে সক্ষম হন। যাত্রীরা নামার সময় লাগেজ বহন না করায় দ্রুত কেবিন খালি করা সম্ভব হয়েছে। লাগেজ নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করে আতঙ্ক তৈরি করা কিংবা বেঁচে থাকার বাসনায় আগে যাওয়ার চেষ্টা করেননি কেউ।

তারা জাপানি শব্দ ′JUNBANKO' বা জুনবাঙ্কো মেনে চলেছেন, যার বাংলা অর্থ দেওয়া যেতে পারে ক্রমানুসারে। এখানে শক্তিপ্রয়োগ বা অগ্রাধিকার বলতে কিছু কাজ করেনি।

সুশৃঙ্খল জাপানি জনগণের জীবন চলার ভিত্তি গড়ে দেওয়া হয় শৈশব থেকেই। কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, অধ্যবসায় এবং একতাবদ্ধতা ছাড়াও পরিবহন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জাপানের একটি অসাধারণ রেকর্ড আছে।

দুর্ঘটনাকবলিত ওই উড়োজাহাজের ক্রুরা তাদের শৈশব শিক্ষা কাজে লাগিয়েছেন। পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ট্রেইনিং অনুযায়ী নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ৮টি দরজার মধ্যে ৩টি দরজাকে নিরাপদ চিহ্নিত করে কাজে লাগিয়েছেন।

ক্রুরা যত দ্রুত সম্ভব ইমার্জেন্সি দরজা খুলে দিয়ে যাত্রীদের বের হয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। কোনো অগ্রাধিকার নয়, ট্রেইনিং অনুযায়ী সিট ধরে ধরে দরজার দিকে এগুতে নির্দেশ দিয়েছেন যাত্রীদের। 

এভাবে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রথমে ৩৬৭ জন যাত্রীকে নিরাপদে নামানোর পর, কেবিন ক্রু ও পাইলটসহ ১২ জন নেমেছেন সবার শেষে। আর এভাবেই বেঁচে যায় ৩৭৯ জনের প্রাণ। এটাই প্রকৃত পেশাদারত্বের পরিচয়। 

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

One killed as bearing pad of metro rail falls at Farmgate, train operations halted

As a safety measure, metro rail services remain suspended from 12:30pm, Dhaka Mass Transit Company Limited official says

2h ago