আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ

প্রতীকী ছবি। অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স
প্রতীকী ছবি। অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হতে পারে। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের প্রায় সমান ও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ বেশি।

উন্নয়ন বাজেট দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হতে পারে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার তুলনায় সামান্য বেশি।

আগামী ৯ এপ্রিল নির্ধারিত আর্থিক সমন্বয় কাউন্সিলের বৈঠকে বাজেটের পরিধি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকায় থাকা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মিশনের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত পরিধি ঠিক করা হবে।

আইএমএফের সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংস্থাটি রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও বাংলাদেশের ক্রমাগত নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত মোকাবিলায় অন্যান্য উদ্যোগের ওপর জোর দিচ্ছে।

আইএমএফ মিশনের সফরের সময় গৃহীত কর সংস্কারের বিষয়ে একমত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আপাতত অর্থ মন্ত্রণালয় পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনা করছে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে পাঁচ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক চার শতাংশ বেশি।

এটি জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশের মধ্যে রাখতে যথেষ্ট হবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, 'বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় বাংলাদেশে ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেকোনো অবস্থাতেই অনেক বেশি।'

গত বছরের ডিসেম্বরে আইএমএফ চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক আট শতাংশে নেমে এলেও আগামী অর্থবছরে ছয় দশমিক সাত শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।

জাহিদ হোসেনের মতে, ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ ও রপ্তানি দুটোই উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে।

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলার তথ্য বিনিয়োগের প্রবণতা প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে—চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই সূচক ৩০ দশমিক এক শতাংশ কমেছে। এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ দশমিক দুই শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে—চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে ৩২ দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিনিয়োগে ধীরগতির মূল কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। শিগগিরই বিনিয়োগে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম। তাই ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অবাস্তব হবে।'

গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে রেমিট্যান্স যে হারে বেড়েছে তাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ক্ষতি পূরণ হবে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রায় সাড়ে ২৮ শতাংশ বেড়ে ২১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়নকারী কমিটির অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, 'রেমিট্যান্স জিডিপিতে পরোক্ষভাবে অবদান রাখে।'

আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

তবে আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার নিচে থাকলে সাড়ে ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, 'বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়নের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।'

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাস্তবসম্মত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বাজেটের খসড়া প্রণয়ন করতে হবে। যেহেতু এটি কোনো রাজনৈতিক সরকার না, তাই সংখ্যা দিয়ে প্রভাবিত করার দরকার নেই।'

তার মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাজেটের আকার খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

'বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নের সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই সরকারের উচিত বাস্তবায়নের দিকে আরও মনোযোগী হওয়া।'

তবে সরকার যে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছে তা 'অবাস্তব' বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'অর্থনীতি অনেক সংকুচিত হয়েছে।'

 

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

Comments

The Daily Star  | English
government

Govt to act with people’s backing if blocked from responsibilities: Advisory council

"The Advisory Council believes that a broader unity is essential to maintain national stability"

19m ago