ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ভোজ্যতেল কোম্পানি বিক্রি করবে গ্লোব গ্রুপ

গ্লোব গ্রুপ ঋণ পরিশোধে কোম্পানি বিক্রি

ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ভোজ্যতেল কোম্পানি গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেড বিক্রি করতে যাচ্ছে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, লোকসানে চলা ভোজ্যতেল কোম্পানিটি আবুল খায়ের গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় অধিগ্রহণ করতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালক সামির আল রশিদ বলেন, অধিগ্রহণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এই কর্মকর্তা কোম্পানিটি বিক্রির কোনো আর্থিক বিবরণও প্রকাশ করতে চাননি।

তিনি বলেন, 'এটি কেবল ব্যাংকের দায় সমন্বয় করতে করা হচ্ছে। আমরা ব্যাংকগুলোর সুদ পরিশোধ করতে না পারায় বেশিরভাগ দায় জমেছে।'

'এস আলম গ্রুপের আগের হস্তক্ষেপের কারণে আমরা চাইলেও কোম্পানিটি চালাতে পারছি না, তাই দিন দিন দায় বাড়ছে। গত ১৫ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার (সার্কেল ০১) কাছে গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেডের প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা দায় রয়েছে। এই শাখার সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেড।

এ পর্যন্ত শাখাটি তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যার মধ্যে প্রায় দুই হাজার ৭৫০ কোটি টাকা মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা অধিগ্রহণ পরিকল্পনা নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন। যার মধ্যে আছে প্রাথমিকভাবে ৩০০ কোটি টাকা পরিশোধ এবং অবশিষ্ট দায় পুনঃতফসিল করা এবং সুদের একটি অংশ মওকুফ করা হবে।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. ওমর ফারুক খান বলেন, গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেড জানিয়েছিল, তারা ঋণ পরিশোধের জন্য কোম্পানিটি বিক্রি করে দেবে।

তিনি বলেন, 'আবুল খায়ের গ্রুপ কোম্পানিটি কিনে নেবে বলে আমরা শুনেছি, তবে এখনো কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানায়নি।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবুল খায়ের গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই উদ্যোগটি আবুল খায়ের গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি তাদের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা।

তবে এ বিষয়ে জানতে আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেডের ওপর এস আলম গ্রুপের প্রভাব শেষ হয়। গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেডের মূল প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এটাকে 'শত্রুতামূলক অধিগ্রহণ' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

ব্যবসায়ী গ্রুপটির চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেন, ইসলামী ব্যাংকের প্রভাব খাটিয়ে গ্লোবের ভোজ্যতেল ব্যবসা বিক্রি করতে বাধ্য করেছে এস আলম গ্রুপ। এস আলমের অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেড সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এস আলম গ্রুপের অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে তারা ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছেন।

স্বাস্থ্য সচেতন মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে সূর্যমুখী তেলের মাধ্যমে গ্লোব ভোজ্য তেলের বাজারে প্রবেশ করেছিল বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণ ও ভোজ্যতেল কোম্পানি স্থাপনে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ২০১১ সালে ইসলামী ব্যাংকে আবেদন করে গ্লোব। প্রথম দফায় ব্যাংকটি কোম্পানিটিকে ২৮২ কোটি টাকা ঋণ দেয়। তবে কারখানা নির্মাণের সময় ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় টাকা আটকে যায়। এতে তাদের লোকসানে পড়তে হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Not going anywhere till the job is done: Adviser Wahiduddin Mahmud

When asked about the chief adviser's resignation the adviser said, 'But he did not say he was leaving'

1h ago