টাকার অভাবে বেক্সিমকোর ২৪ কারখানা বন্ধ

বেক্সিমকোর কারখানা বন্ধ

তীব্র তারল্য সংকট ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ না করায় সংকটে পড়া বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকস বন্ধ করে দেওয়ায় এই শিল্পগোষ্ঠীর মোট বন্ধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ২৪।

কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় গত আগস্ট থেকে এই শিল্পগোষ্ঠীর কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা টানা পঞ্চম দিনের মতো গাজীপুরের চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এরপর কারখানা বন্ধের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক (অর্থ ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) ওসমান কায়সার চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো এলসি সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। এখন টাকার অভাব দূর ও উৎপাদন আবার শুরু করতে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার।'

সম্প্রতি শিল্পগোষ্ঠীটির রিসিভার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।'

তার দাবি, বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংকিং সমস্যা নেই।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তারের পর তোপের মুখে পড়ে বেক্সিমকো গ্রুপ।

গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত চার মাসে কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে না পারায় গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ২৩ পোশাক ও বস্ত্র উৎপাদন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

ওসমান কায়সার চৌধুরীর মতে, চার মাসের পরিচালন স্থগিতাদেশের কারণে শিল্পগোষ্ঠীটি টাকার অভাবে পড়েছে। তাই কর্মীদের গত অক্টোবরের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'আমাদের ২৩ পোশাক ও বস্ত্র কারখানায় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মাসিক বেতন প্রায় ৮০ কোটি টাকা। স্বাভাবিক কার্যক্রম চলাকালে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের রপ্তানি প্রতি মাসে ছিল ৩০ মিলিয়ন ডলার।'

তিনি আন্দোলনরত শ্রমিকদের অক্টোবরের বেতন পরিশোধের জন্য ২০ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'যদিও বেক্সিমকো জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বেতন পরিশোধ করতে পেরেছে। অক্টোবরের বেতন দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকা নেই।'

'সবার বেতন দিতে অনেক টাকা দরকার। এসব পরিশোধের জন্য অন্য কোনো জায়গা থেকে হঠাৎ টাকা নেওয়া সম্ভব না।'

শিল্পগোষ্ঠীটি আগে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভেবেছিল। বিপুল সংখ্যক কর্মীর কারণে সরকার তাদেরকে তা করতে দেয়নি বলেও জানান বেক্সিমকো কর্মকর্তা।

জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকোর ২৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ আছে। এর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে বলে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে, ব্যাংকগুলো তাদের পরিশোধিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি (১০ শতাংশ ফান্ডেড ও ১৫ শতাংশ নন-ফান্ডেড) কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে পারে না।

বেক্সিমকো সরকারের হস্তক্ষেপ চাইলেও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মনে করেন, শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য সরকারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।

তিনি বলেন, 'যদি বেক্সিমকো বেতন দিতে না পারে, তাহলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উচিত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সমাধান বের করা।'

তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথমে এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার করার আহ্বান জানান।

টাকা জোগাড় ও কর্মীদের বেতনের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পদ বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

বিজিএমইএ প্রশাসক বলেন, 'সরকার প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেবে না। মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে বেক্সিমকো ব্যবস্থাপনাকে অবশ্যই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্পগোষ্ঠীটির অপর শীর্ষ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিসিভার নিয়োগ করায় বিদেশি ক্রেতাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্রেতারা রিসিভার নিয়োগের কারণ খুঁজছেন।'

এটি বেক্সিমকোর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, রিসিভার নিয়োগ সাধারণত আর্থিক দেউলিয়াপনার ইঙ্গিত দেয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট করে।

রিসিভার রুহুল আমিন বলেন, 'সম্প্রতি টাকার অভাব দেখা দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে শিল্পগোষ্ঠীটি যে টাকা আয় করেছে সেগুলো কোথায়?'

তার প্রশ্ন, 'আসলেই কি তারা টাকা পাচার করেছে?'

শিগগিরই কারখানাগুলো পরিদর্শন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান খুঁজে বের করা হবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Uncertainty created as specific polls date has not been announced: Tarique

Tarique reiterated the demand that the national election be held by December

24m ago