ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

প্রথমবার টাকায় বৈদেশিক বিল পরিশোধ

প্রথমবারের মতো বৈদেশিক ঋণ-অর্থায়নে (অধিকাংশ) পরিচালিত একটি প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের বিল টাকায় পরিশোধ করেছে সরকার। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণে আরও একটি ধাপের সূচনা হলো।

নির্মাণাধীন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর প্রকল্প ব্যয় ১৭ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ১০২ কোটি ডলার।

২ শতাংশ হার সুদে প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ ঋণ দিচ্ছে চীন। যা ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। বাকি ১৫ শতাংশ খরচ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে মার্কিন ডলারে ঋণের অর্থ পরিশোধ করছে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়না। বাংলাদেশ সরকার ওই ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করবে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নের প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, 'আমরা তাদের (ঠিকাদার) টাকায় বিলটি গ্রহণ করতে রাজি করিয়েছি যেহেতু তাদের বাংলাদেশেও কিছু ব্যয় আছে।'

গত সপ্তাহে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, 'তারা বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।'

তার মতে, প্রকৌশলী ও কর্মীসহ ২৫০ জনের বেশি চীনা নাগরিক এবং ১ হাজার বাংলাদেশি এখন এই প্রকল্পে কাজ করছেন।

বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করে এবং টাকা অবমূল্যায়নের অনুমতি দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের তুলনায় আমদানি বিল বেশি হওয়ায় গত ৩১ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছরের একই দিনের ৪২.২০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২৯.৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের নভেম্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন এবং অক্টোবরে প্রথম ১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা বা ১৩ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অংশের পরিমাণ ৩৪ কোটি টাকা।

পরবর্তী পেমেন্ট ৬০০ কোটি টাকা বা ৫৮.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জুনে পরিশোধ করা হবে এবং এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করবে।

শাহাবুদ্দিন খান বলেন, 'বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে।'

এক্সপ্রেসওয়েটি সম্পন্ন হলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোনের সংযোগ স্থাপন করবে। এটি ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত সংযুক্ত হবে।

উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ ৩০টি জেলার চার কোটিরও বেশি মানুষ এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।

এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপিতে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ যোগ হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৫ শতাংশের বেশি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জুনের শেষ নাগাদ তা ৮ শতাংশে পৌঁছাবে।

শাহাবুদ্দিন খান বলেন, 'আগামী অর্থবছরের মধ্যে প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।'

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বৈদেশিক সহায়তা বাজেট ও হিসাব শাখার যুগ্ম সচিব মাসুদুল হক বলেন, বৈদেশিক ঋণ অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পে এটি প্রথম স্থানীয় মুদ্রায় বিল পরিশোধ।

তিনি বলেন, 'এ ধরনের সব প্রকল্পের ক্ষেত্রেও যদি একই কাজ করা যায়, তাহলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সহায়তা করবে।

ঠিকাদারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। 

এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ এবং এটি রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে সহায়তা করবে। 

তিনি বলেন, 'এই উদ্যোগ অর্থ সঞ্চালনে সহায়তা করবে এবং স্থানীয় সরবরাহকারীরা পুরোপুরি উপকৃত হবে। বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোতে এ ব্যবস্থা চালু করা গেলে তা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'

Comments

The Daily Star  | English

People cautioned of travelling to India, affected countries as Covid spreads

DGHS has also instructed to enhance health screening and surveillance measures at all land, river, and airports

4h ago