রিজার্ভ বাড়াতে বেসরকারি ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

আগামী ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রিজার্ভ বাড়াতে ডলার খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই ডলার ঘাটতিতে থাকায় তারা এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত গত সোম ও মঙ্গলবার আর্থিক সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংক থেকে সাত কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ইসলামী ব্যাংক থেকে ডলার কেনার বিষয়টি স্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তঃব্যাংক বিনিময় হারে গত সোমবার পাঁচ কোটি ডলার ও মঙ্গলবার দুই কোটি ডলার কেনা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত ডলার থাকলে আমরা তাদের কাছ থেকে তা কিনব। এ ধরনের লেনদেন স্বাভাবিক। আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে হবে।'

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামী ব্যাংক এমন এক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সাত কোটি ডলার বিক্রি করেছে যখন আমদানির জন্য এলসি খুলতে ব্যাংকটি হিমশিম খাচ্ছে।

গত ১ থেকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ কোটি ডলার।

প্রায়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ন্যূনতম তারল্যের স্তর বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়া শরিয়াহভিত্তিক এই ব্যাংকটি ডলারপ্রতি প্রায় ১১৬ টাকায় রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে।

এটি বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) অনুমোদিত ডলারের সর্বোচ্চ হার। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশে এই সংগঠন দুটি ডলারের হার নির্ধারণকারী করে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করে ইসলামী ব্যাংক সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা লোকসান দেয়। দেশের ৬১টি তালিকাভুক্ত বা তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকের জন্য এটি বিশাল ধাক্কা।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মনিরুল মওলার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনতে শুরু করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রিজার্ভ এত দ্রুত কমে গেলে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণ নেতিবাচক বার্তা পাবে।'

চলতি নভেম্বর পর্যন্ত মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৯ বিলিয়ন ডলার। গত তিন মাসের তুলনায় তা প্রায় ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ডলারের বর্তমান মজুদ তিন মাসের সামান্য বেশি সময়ের আমদানি বিল মেটাতে পারবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনা রিজার্ভ বাড়ানোর অংশ।'

তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাফেডা-এবিবি অনুমোদিত ১১৬ টাকা হারে রেমিট্যান্স কিনে ইসলামী ব্যাংক কেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সাত কোটি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছে। এটি বিদ্যমান একাধিক বিনিময় হারের সমস্যা।'

বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কেনার চেষ্টা করলেও গত অর্থবছরে রেকর্ড ১৩ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার বিক্রির পর বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি কমেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত ১ জুলাই থেকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করেছে।

তারা আরও জানান, প্রতি কর্মদিবসে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় ছয় কোটি ডলার বিক্রি করে থাকে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি পণ্যের দাম পরিশোধের জন্য সাধারণত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতে হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সোনালী ব্যাংক গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২৪ কোটি ডলার আমদানি খরচ পরিশোধের অনুরোধ করেছিল।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

20h ago