কী কী কারণে হাত-পায়ে পানি জমে, কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

কী কী কারণে হাত-পায়ে পানি জমে, কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
ছবি: সংগৃহীত

হাতে-পায়ে পানি জমা বা ফোলা বাংলাদেশে খুবই পরিচিত একটি শারীরিক সমস্যা। অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটাহাঁটির কারণে সাময়িকভাবে পানি জমতে পারে। আবার কখনো হতে পারে গুরুতর কোনো রোগের সতর্ক সংকেত। তাই এর কারণ, লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখা জরুরি।

এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান।

শরীরে, বিশেষত হাতে-পায়ে পানি জমার কারণ কী

ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, হাতে-পায়ে পানি জমার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন:

১. কিডনি রোগ: কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরের বাড়তি পানি বের হতে পারে না। ফলে হাত-পা ফুলে যায়।

২. হার্টের সমস্যা: হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া স্বাভাবিক না হলে রক্ত ঠিকভাবে সারা শরীরে সঞ্চালন হতে পারে না। এতে পায়ে ও গোড়ালিতে পানি জমে।

৩. লিভারের অসুখ: লিভারের সমস্যাজনিত কারণে শরীরে প্রোটিন কমে যায়। ফলে শরীর পানি ধরে রাখতে শুরু করে।

৪. থাইরয়েডের সমস্যা: শরীরে থাইরয়েড হরমোন কমে গেলেও মুখ, হাত, পা ফোলা দেখা দেয়।

৫. অন্তঃসত্ত্বাকালীন: নারীদের অন্তঃসত্ত্বাকালে হরমোনাল পরিবর্তন ও রক্তনালীর চাপের কারণে পায়ে পানি জমতে পারে।

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: স্টেরয়েড, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ—এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।

৭. অধিক লবণ খাওয়া: মাত্রাতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, ফলে শরীর ফুলে যায়।

৮. শিরার সমস্যা: শিরায় কোনো কারণে রক্ত জমাট বাঁধা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) বা দীর্ঘমেয়াদি শিরার দুর্বলতা (ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি) হলে পা ফুলে যেতে পারে।

লক্ষণ

হাতে-পায়ে পানি জমার পাশাপাশি আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা মূল কারণ সম্পর্কে ধারণা দেয়। সেগুলো হলো—

১. শ্বাসকষ্ট (বিশেষত শুয়ে থাকা অবস্থায়)

২. মূত্র গাঢ়, ফেনাযুক্ত হওয়া এবং মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া

৩. দ্রুত ওজন বৃদ্ধি

৪. চোখ কিংবা শরীর হলুদাভ হওয়া

৫. পেটে পানি জমা

৬. চোখের নিচে ফোলা

৭. ক্লান্তি, দুর্বলতা

৮. হঠাৎ একপাশের পা ফুলে যাওয়া

৯. পায়ের ত্বক কালচে বা লাল হয়ে যাওয়া

১০. পায়ের ত্বকে ঘা দেখা দেওয়া

করণীয়

ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, হাতে-পায়ে ফোলা দেখা দিলে অনেকেই নিকটস্থ ঔষধালয় থেকে মূত্রবর্ধক (ডিউরেটিক), যেমন: ফ্রুলেক বা ফুসিড ইত্যাদি ওষুধ খেয়ে থাকে। এতে সাময়িকভাবে ফোলার পরিমাণ কমে গেলেও এটি মূল রোগকে আড়াল করে রাখে। এ ছাড়া এই জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে শরীরে মারাত্মক পানিশূন্যতা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, প্রেশার কমে যাওয়া ও লবণের তারতম্য দেখা দেয়।

  • উপসর্গ দেখা দিলে সাময়িকভাবে করণীয়
  • পা কিছুসময় উঁচু করে রাখা
  • দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা এড়ানো
  • অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা
  • ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত

নিম্নোক্ত পরিস্থিতিতে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

১. হঠাৎ দ্রুত হাত-পা ফুলে যাওয়া

২. শুয়ে থাকা অবস্থায় শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হওয়া

৩. মূত্রের পরিমাণ হঠাৎ কমে যাওয়া

৪. ফোলার সঙ্গে লালচে ভাব, গরম ও ব্যথা (সংক্রমণের সম্ভাবনা)

৫. পেট, মুখ বা পুরো শরীরে পানি জমা

৬. ওজন দ্রুত বেড়ে যাওয়া

৭. অন্তঃসত্ত্বাকালে পায়ের ফোলার সঙ্গে মাথা ব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখা

৮. ফোলাভাব ২ থেকে ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে

ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, হাতে পায়ের পানি জমাকে ছোট সমস্যা ভেবে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ এটি অনেক সময় হার্ট, কিডনি কিংবা লিভারজনিত রোগের আগাম সংকেত হতে পারে। তাই সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

Comments