‘হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে, কিন্তু বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি’

হুমায়ূন আহমেদ ও আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: সংগৃহীত

হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার। তার লেখা কোথাও কেউ নেই, বহুব্রীহি, নক্ষত্রের রাত নাটকগুলো নতুন প্রজন্মের কাছেও তুমুল জনপ্রিয়। আগুণের পরশমণি এবং শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্র তার অনন্য সৃষ্টি।

১৩ নভেম্বর নন্দিত এই লেখকের জন্মদিন। তার লেখা কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাই চরিত্রসহ অনেক আলোচিত নাটকে অভিনয় করে নন্দিত হয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর। তাদের মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কথা বলেছেন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিল দীর্ঘ দিনের। আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বন্ধুত্ব অটুট ছিল। সত্যি কথা বলতে, বন্ধুত্বে মান অভিমান যে হয়নি তা নয়। অনেকবার হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে মান অভিমান হয়েছে, ঝগড়া হয়েছে, কিন্তু বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি। অল্প সময়ের মধ্যে সব ভুলে গেছি আমরা।

তার রাগ যেমন ছিল, আবার ঠাণ্ডা হতেও সময় লাগত না। প্রচুর মান অভিমান হয়েছে। আড্ডার মধ্যে ঝগড়া হয়েছে বেশি। আমি তো ওতো উঁচু গলায় ঝগড়া করতে পারি না। কিন্তু হুমায়ূন রেগে গেলে ভীষণ ক্ষেপে যেতেন। খুব কঠিনভাবে রাগারাগি করতেন। আড্ডার ঝগড়া কিংবা মান অভিমান কখনো স্থায়ী হয়নি। আড্ডাও শেষ, মান অভিমানও শেষ ।

একটি ঘটনা বলি, একবার শুটিং করতে গেছি। আমার ছোট একটি দৃশ্য আছে। শুটিং স্পটে দুপুরে পৌঁছে যাই। কিন্তু দুপুর শেষ করে সন্ধ্যা নামে। আমার কাজটুকু আর হয় না। এভাবে সারাদিন কেটে যায়।

একসময় আমি বলি কাজটুকু শেষ করে দিতে। হুমায়ূন কাজে ডুবে ছিলেন। আমার শুটিং না হওয়ায় বিরক্ত হই। তিনিও বিরক্ত হয়ে বলেন, যান আপনাকে লাগবে না। এরপর কোনো কথা না বলে আমিও চলে আসি।

মাঝরাতে দলবল নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ আমার বাসায় হাজির। অভিমানের কথা ভুলেই গেছেন। আমিও ভুলে গেছি। দলবল নিয়ে এসে হইচই আর আড্ডা। এরপর আমার স্ত্রীকে রান্না করতে বলেন। শুরু হয় তুমুল আড্ডা। দিনের বেলায় মান অভিমানের কথা কারও মনে নেই।

তারপর দীর্ঘ সময় আড্ডা দিয়ে এবং মাঝরাতে খেয়ে বাসায় ফেরেন। এইরকম শিশুর মতো সরল ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। মান অভিমান হতে সময় লাগতো না, সেটা কেটে যেতেও সময় লাগতো না।

বন্ধু-বান্ধব ছাড়া হুমায়ুন আহমেদ চলতে পারতেন না। যেখানেই যেতেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে যেতেন। বন্ধু ছাড়া তাকে দেখিনি।

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সত্যিকারের গল্পকার। গল্প বলা মানুষ ছিলেন। খাঁটি গল্প বলা মানুষ যাকে বলে। তার গল্পে জটিলতা ও মারপ্যাঁচ কম থাকত। সংলাপ লিখতেন সরলভাবে। খুব সহজ করে সংলাপ লিখতেন। অথচ কি আশ্চর্য! সেইসব দারুণ দারুণ সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ফিরত। এখানেই ছিল তার গল্প বলার জাদু। এখানেই অনন্য তিনি।

জন্মদিনে তার প্রতি ভালোবাসা।

Comments

The Daily Star  | English

Public Service Act: Ordinance out amid Secretariat protests

The government last night issued an ordinance allowing dismissal of public servants for administrative disruptions within 14 days and without departmental proceedings.

8h ago