২৯ নলকূপের ২৮টিতে আর্সেনিক, আক্রান্ত এক গ্রামের ৫০ জন

আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন এক গ্রামের ৫০ জন। ছবি: রবিউল হাসান/স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামে অন্তত ৫০ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই গ্রামের ২৯ নলকূপের মধ্যে ২৮টিতেই পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক।

বেতবাড়িয়া গ্রামের ছবি বেগম (৪৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বছর পাঁচেক আগে হাত-পায়ে ছোট ছোট গুটি দেখা দেয়। হঠাৎ করে গত ৩ মাস থেকে এগুলো বেড়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ি। মাস খানেক আগে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাই। চিকিৎসকরা জানান আর্সেনিকের কারণে এমন হয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'ওই প্রথম আর্সেনিকের নাম শুনি।'

তাদের পরিবারে ৭ সদস্যের মধ্যে ৪ জনই আর্সেনিকে আক্রান্ত। তিনি ছাড়া ছেলে ইসমাইল (২৫), আবু জোবায়ের (২২) ও ইয়াকুব (১৬) এই রোগে আক্রান্ত।

একই গ্রামের গ্রামের আলেফ নূর (৪৩) ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের পরিবারে ৭ জনের মধ্যে মেয়ে আঁখি (১৭) ও ছেলে আকরামও (২৫) আর্সেনিকে আক্রান্ত।

রাজমিস্ত্রি রনি আহমেদ (২৪) বলেন, 'পরিবারে ৮ জন সদস্যের মধ্যে মা-ভাই মিলে ৪ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর থেকে এই রোগে আক্রান্ত হলেও বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। নলকূপের পানি থেকেও আর্সেনিক হয় তা জানা ছিল না।'

তিনি জানান, মাত্র মাস দেড়েক আগে আর্সেনিকের বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

গ্রামবাসীরা ডেইলি স্টারকে জানান, গত এক মাস আগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গ্রামের সব নলকূপ পরীক্ষা করেছে। যেগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে সেগুলোতে লাল দাগ দিয়ে গেছে এবং এগুলোর পানি পান না করার জন্য বলেছে।

তারা বর্তমানে ওইসব নলকূপের পানি পান না করলেও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছেন। খাবার পানি অন্যত্র থেকে সংগ্রহ করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি জানার পর গ্রামের ২৯ নলকূপ পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। নলকূপগুলোয় লাল দাগ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে এইসব নলকূপের পানি পান না করার জন্য বলা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বেতবাড়িয়া গ্রামে ৫৪টি পরিবারে প্রায় ৫০ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত।'

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ওই এলাকায় ২টি পাম্প বসানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ট্যাংক বসিয়ে ট্যাপের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বেতবাড়িয়া গ্রামে পার্শ্ববর্তী বারঘোরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রামে ১৯৯৩ সালে দেশের মধ্যে প্রথম আর্সেনিক পাওয়া যায়। পরের বছর ওই গ্রামে ৮ জন রোগী শনাক্ত হয়।

Comments

The Daily Star  | English
July uprising and the rise of collective power

July uprising and the rise of collective power

Through this movement, the people of Bangladesh expressed their protest using a language shaped by long-standing discontent.

10h ago