ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টাকে নির্বোধ ও গণ্ডমূর্খ বললেন মাস্ক

ইলন মাস্ক, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত
ইলন মাস্ক, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত

ধনকুবের ও মার্কিন সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ ডিওজিই'র (ডোজ) প্রধান ইলন মাস্ক দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে 'নির্বোধ' ও 'গণ্ডমূর্খ' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি নাভারোর বুদ্ধিমত্তাকে 'এক বস্তা ইটের' সঙ্গে তুলনা করেন।

গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সহযোগী ও প্রধান মিত্রদের মধ্যে তার সাম্প্রতিক শুল্কনীতি নিয়ে বড় আকারে মতভেদ দেখা দিয়েছে, যার বড় উদাহরণ মাস্ক-নাভারোর এই বিবাদ।

ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি বাণিজ্য পরিকল্পনার মূল স্থপতি হার্ভার্ড থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী পিটার নাভারো।

ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত আমদানি শুল্ক বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে ধস নামিয়েছে। এরপর থেকেই নাভারো-মাস্কের বিবাদ দানা বেধে উঠেছে। ট্রাম্পের অন্য সব নীতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানালেও, শুল্ক-যুদ্ধ নিয়ে মাস্ক তার আপত্তির কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন।

ব্লুমবার্গের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ এপ্রিল ট্রাম্প-শুল্ক আরোপের পর প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন ইলন মাস্ক। 

নাভারোর প্রতি ট্রাম্পের এই অসৌজন্যমূলক মন্তব্য প্রকারান্তরে ট্রাম্পের নীতিমালারই সমালোচনা—এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। বিরল এই ঘটনায় ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, তা নিয়ে চলছে জল্পনাকল্পনা। 

তবে এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দুই শীর্ষ সহযোগীর মতৈক্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

'মাস্ক গাড়ী উৎপাদনকারী নন, তিনি অ্যাসেম্বলার'

হোয়াইট হাউসে নাভারো ও মাস্ক। ফাইল ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউসে নাভারো ও মাস্ক। ফাইল ছবি: এএফপি

সোমবার সিএনবিসির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাস্ককে এক হাত নেন নাভারো। তিনি বলেন, টেসলার প্রধান নির্বাহী ও কোটিপতি মাস্ক আদতে কোনো 'গাড়ি উৎপাদনকারীই নন', বরং তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সস্তায় যন্ত্রাংশ জোগাড় করে 'জোড়াতালি দিয়ে গাড়ি অ্যাসেম্বল' করায় পারদর্শী। 

নাভারো বলেন, 'হোয়াইট হাউসের সব সদস্য ও আমেরিকার জনগণের ধারণা, ইলন একজন গাড়ি উৎপাদনকারী। কিন্তু তিনি গাড়ি উৎপাদন করেন না, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি শুধু যন্ত্রাংশ জুড়ে দিয়ে গাড়ি অ্যাসেম্বল করেন।'

তিনি জানান, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে মাস্কের টেসলার কারখানায় কিছু ইলেকট্রিক গাড়ির ইঞ্জিনে জাপান ও চীন থেকে আসা ব্যাটারি ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করে আনা অন্যান্য যন্ত্রাংশ জুড়ে দেওয়া হয়।

নাভারো মার্কিন গাড়ি নির্মাণে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে উৎপাদিত চাকা, ট্রান্সমিশন ও ইঞ্জিন ব্যবহারের দাবি করেন।

তিনি আরও জানান, বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ কিনে আনা 'অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরুপ'।

তিনি বলেন, 'ইলন মাস্ক সস্তায় বিদেশি যন্ত্রাংশ চান। আমরা সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু আমরা চাই এগুলো দেশ থেকেই কেনা হোক।'

'ইলন মাস্ক যা করেন, সেটাই ভালো চোখে দেখা হয়', যোগ করেন নাভারো।

'নাভারো গণ্ডমূর্খ—তিনি এক বস্তা ইটের চেয়েও নির্বোধ'

ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্ক। কোলাজ ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্ক। কোলাজ ছবি: এএফপি

নাভারোর সাক্ষাৎকারের জবাবে সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করেন মাস্ক।

তিনি বলেন, নাভারো 'প্রকৃত অর্থেই একজন নির্বোধ।'

এক পোস্টে মাস্ক বলেন, 'তিনি (নাভারো) যা বলছেন, তা একেবারেই মিথ্যা।'

'অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে টেসলার আমেরিকায় নির্মিত গাড়ির সংখ্যা বেশি। নাভারো এক বস্তা ইটের চেয়েও বড় নির্বোধ', অপর এক পোস্টে বলেন মাস্ক।

পরবর্তীতে আবারো মজা করে পোস্ট করেন মাস্ক। 

ইটের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের তুলনা খুবই অন্যায্য। এটা ইটের বুদ্ধিমত্তার প্রতি অপমানের সমতুল্য।

হোয়াইট হাউসের উদ্যোগ 

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: রয়টার্স

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এই বিবাদকে হালকা করার চেষ্টা করেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এতে কোনো সন্দেহ নেই যেই ওই দুই ব্যক্তি বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে পুরোপুরি ভিন্ন মত পোষণ করেন।'

'তবে এটাও ঠিক, ছেলেরা ছেলেদের মতোই আচরণ করবে এবং তাদের (মাস্ক-নাভারো) এই বিবাদে আমরা কোনো বাধা দেব না', যোগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে মাস্কের এক্সের পোস্ট নিয়ে নাভারোর কাছে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেও তিনি জবাব দেননি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের মধ্যে বিবাদ ও মতৈক্যে বাধা না দেওয়ার নীতি অনুসরণ করে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরেই। এমন কী, তিনি এতে উৎসাহও দেন বলে কথিত আছে।

তবে দুই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার বিবাদ এভাবে জনসম্মুখে চলে আসার পরেও বাধা না দেওয়া বা নিরুৎসাহিত না করার বিষয়টিকে অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্পের সঙ্গে নাভারো ও মাস্ক, উভয়েরই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় লাখো ডলার অনুদান দেন মাস্ক। তিনি বর্তমানে প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অন্যতম। তিনি ট্রাম্পের সব নীতিমালায় কড়া সমর্থন দিলেও শুল্কনীতির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখিয়েছেন। 

মাস্ক, ট্রাম্পের উদ্যোগ আপত্তি জানিয়ে ইউরোপের সঙ্গে শুল্ক-মুক্ত বাণিজ্যের দাবি জানিয়েছেন।

অপরদিকে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও বাণিজ্যিক বিষয়গুলোতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন নাভারো। পরবর্তীতেও প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুগত ছিলেন তিনি। 

ট্রাম্পের এক সাবেক উপদেষ্টা এনবিসি নিউজকে বলেন, 'তিনি (নাভারো) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য কারাবরণ করেছেন। আমি জানি না কারো প্রতি আনুগত্য দেখানোর এর চেয়েও ভালো কোনো উপায় আছে কি না। বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।'

'অবশ্যই, ইলন (মাস্ক) তার কাছের লোক এবং তাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া আছে। তবে এখানে (নাভারোর সঙ্গে) তার (ট্রাম্পের) সম্পর্ক এক ভিন্ন মাত্রায়', যোগ করেন তিনি। 

সাবেক উপদেষ্টা বলেন, 'যদি দুইজনের মধ্যে তুমুল বিবাদ দেখা দেয়, তাহলে আমার মনে হয় না পিটারের (নাভারো) ওপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।'

'আমি আশা করবো বিষয়টি ওভাবে জনসম্মুখে আসবে না। আমি জানি না এর শেষ কোথায়, তবে আমি জানি প্রেসিডেন্টের জন্য পিটার যা করেছে, তা তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ', যোগ করেন তিনি।

গত বছর চার মাস ফেডারেল কারাগারে কাটান নাভারো। মার্কিন ক্যাপিটলে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলার বিষয়টি তদন্তের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেসের হাউস কমিটির একটি বিচারিক আদেশ অবজ্ঞা করার অভিযোগ আনা হয় নাভারোর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে 'কংগ্রেস অবমাননার' সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুক্তি পেয়েই তিনি ট্রাম্পের সমাবেশে যোগ দেন এবং তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English
US tariff cut helps Bangladesh garment industry

Will Bangladesh benefit from higher US tariffs on China, India?

The Trump administration’s imposition of higher reciprocal tariffs on India and China, two of Bangladesh’s main competitors in the global readymade garments sector, is definitely a boon for Bangladesh, according to local exporters.

10h ago