পেঁপে পাতার রস খেলে কি আসলেই প্লাটিলেট বাড়ে

ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু আক্রান্তদের শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে জনমনে এক ধরনের আতঙ্কও কাজ করে। অনেকেরই ধারণা, পেঁপে পাতার রস খেলে শরীরে প্লাটিলেট বেড়ে যায়। সে কারণে দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে জোর করে পেঁপে পাতার রস খাওয়ানো হচ্ছে।

তবে, পেঁপে পাতার রস খেলে প্লাটিলেট বাড়ার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'অনেকেই এটা খায়। কিন্তু এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কোনো তথ্য নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রাকৃতিকভাবেই ৪-৫ দিন পর্যন্ত প্লাটিলেট কমে। এরপর ৬-৭ দিন পর থেকে প্রাকৃতিকভাবেই আবার সেটা বাড়তে থাকে। ওষুধ না খেলেও প্রাকৃতিকভাবেই তা বাড়বে। সুতরাং পেঁপে পাতার রস খেলে প্লাটিলেট বাড়ে—এটা বলা যাবে না।'

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তরল খাবার বেশি খাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, 'ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিক খাবারই খাবে। তবে তরল খাবার বেশি খেতে হবে। কারণ ডেঙ্গুর কারণে শরীর থেকে ফ্লুইড বের হয়ে যায়। ফলে প্রেসার-পালস কমে যায়, শক সিনড্রোম হয়। সেক্ষেত্রে পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজসহ তরল জাতীয় খাবার বারবার খেলে তা রোধ করা যায়। সেজন্য আমরা ডেঙ্গু রোগীদের অল্প অল্প করে বারবার তরল খাবার খেতে বলি। যদি কেউ খেতে না পারে, বমি-পাতলা পায়খানা হয়, সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখানে রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে ফ্লুইড পাওয়া যায়। সেজন্য আমরা হাইড্রেশন মেইনটেইন করতে বলি, যেটা সবচেয়ে জরুরি।'

'পাশাপাশি রোগীকে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে। এতে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে', যোগ করেন তিনি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কেন প্লাটিলেট কমে, বিষয়টি নিয়ে এই বিশেষজ্ঞ জানান, মেগাক্যারিওসাইট সেলের মাধ্যমে বোনম্যারোতে প্লাটিলেট তৈরি হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস ওই জায়গাটায় আক্রান্ত করে এটাকে সাপ্রেস করে। যার ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবেই প্লাটিলেট কমে যায়।

তিনি আরও জানান, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের প্রতি ১০০ মিলিমিটার রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা সর্বনিম্ন দেড় লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ পর্যন্ত থাকে। মূলত শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ এক লাখের বেশি থাকলেই হয়। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের জটিলতা হয় না।

শরীরে প্লাটিলেট কমে গেলে কী হতে পারে, তা নিয়ে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, 'শরীরে প্লাটিলেটের অভাব হলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। প্লাটিলেট শরীরে রক্তক্ষরণ করতে দেয় না। প্লাটিলেট বেশি কমে গেলে দাঁতের গোঁড়া দিয়ে, বমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে। আবার নারীদের ক্ষেত্রে হয়তো পিরিয়ড শুরু হয়ে আর থামছে না বা অসময়ে পিরিয়ড শুরু হয়। মোদ্দা কথা প্লাটিলেট কমে গেলে তা রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।'

'তবে প্লাটিলেট সামান্য কমলে রক্তক্ষরণ হয় না। বেশি পরিমাণে কমলে রক্তক্ষরণ হয়।'

মানুষ কখন বুঝবে যে প্লাটিলেট দিতে হবে, এ বিষয়ে প্রখ্যাত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞের ভাষ্য, 'ডেঙ্গু হলেই প্লাটিলেট দিতে হয় না। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই প্লাটিলেট লাগে না। যদি প্লাটিলেট বেশি কমে যায়, রক্তক্ষরণ হয়, চিকিৎসক তখন যদি মনে করেন যে প্লাটিলেট দেওয়া দরকার, তখন তা দিতে হবে। কিন্তু প্লাটিলেট কমলেই রক্ত দিতে হবে, বিষয়টি মোটেও তা নয়।'

বেশি কমার মাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, 'শরীরে প্লাটিলেট কমে ২০ বা ১০ হাজারের নিচে নেমে এলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হয়। চিকিৎসক দেখলেই তখন বুঝে প্লাটিলেট নেওয়ার কথা বলবেন। প্লাটিলেট কমা মানেই কিন্তু ভয়ংকর কিছু না। এর জন্য সাধারণত মানুষের মৃত্যু হয় না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণে শিরা ও ধমনী থেকে ফ্লুইড বের হয়ে গেলে প্রেসার-পালস কমে যায়, শক সিনড্রোম হয়, যা বেশি ভয়ংকর।'

'সবাইকে বলতে চাই, প্লাটিলেট কমলেই কেউ যাতে প্লাটিলেট দেওয়ার জন্য ব্যস্ত না হয়ে পড়েন। চিকিৎসক যদি মনে করে যে প্লাটিলেট দেওয়া দরকার, তাহলে দিলেই হবে। আবারও বলি যে, ডেঙ্গু হলে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। আর প্লাটিলেট কমে যাওয়া মানেই ভয়ংকর কিছু নয়। প্রাকৃতিকভাবে এটা যেমন কমে, আবার প্রাকৃতিকভাবেই বাড়ে', যোগ করেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

8h ago