বেড়েছে চাহিদা, ওএমএসের চাল-আটা না পেয়ে অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে

বেড়েছে চাহিদা, ওএমএসের চাল-আটা না পেয়ে অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে
লালমনিরহাট শহরে কালীবাড়ী এলাকায় চাল-আটা কিনতে ওএমএস দোকানের সামনে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কয়েকমাস আগেও চাল-আটা কিনতে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) দোকানগুলোতে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকে দেখা যেতো না। এখন নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মধ্যবিত্তরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন ওএমএস দোকান থেকে চাল-আটা কেনার জন্য।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা লোকজন ওএমএস দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে লজ্জা ও বিব্রতবোধ করলেও পরিস্থিতি তাদেরকে বাধ্য করছে। তাদের মধ্যে কেউ আবার মুখ ঢেকে রাখেন কাপড় দিয়ে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও অনেকেই চাল-আটা না পেয়ে ফিরছেন খালি হাতে। কেউ কেউ আবার শুধু চাল পাচ্ছেন কিন্তু আটা পাচ্ছেন না।

লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ী এলাকায় ওএমএস দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নাম প্রকাশ না করা শর্তে ৪৫ বছর বয়সি এক নারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন আর মধ্যবিত্ত নেই। এখন রয়েছে নিম্নবিত্ত আর উচ্চবিত্ত।'

ওই নারী ডেইলি স্টারকে জানান, তার স্বামী একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা বেতন পান। তাদের ৩ জন ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বামীর বেতন দিয়ে সংসার চলছে না। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচও বেড়েছে।

'বাজার থেকে চাল-আটা কিনে সংসার চালালে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ বহন করা সম্ভব হবে না। খুব অভাবে পড়েছি। জানিনা সামনের দিনগুলোতে আরও কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়,' তিনি যোগ করেন।

লাইনে থাকা আয়শা বেগম (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক সচ্ছল পরিবারের লোকজনকে লাইনে দাঁড়িয়ে ওএমএস দোকান থেকে চাল-আটা কিনতে দেখা যাচ্ছে। কয়েকমাস আগে তাদের দেখা যায়নি। আমরা নিয়মিত ওএমএস দোকান থেকে চাল-আটা কিনছি। কিন্তু বর্তমানে লাইনে এতবেশি ভিড় বেড়েছে তাতে অনেকে চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। ওএমএস দোকানে ন্যায্যমূল্যে চাল-আটা কিনতে না পারলে আমাদের অবস্থা আরও বেশি কাহিল হতো।'

লালমনিরহাট শহরের কলেজ রোডে ওএমএস দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়ানো আতাউর রহমান (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ওএমএসের দোকান থেকে চাল-আটা কিনতে হবে এটা কখনই ভাবিনি। ছেলে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। প্রতিমাস ২২ হাজার টাকা বেতন পায়। কিন্তু এ টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মতো অনেকেই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে ওএমএস দোকান থেকে চাল-আটা কিনছেন।'

কুড়িগ্রাম শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় ওএমএস দোকানে চাল-আটা কিনতে আসা মনজুর আলী (৫০) ডেইলি স্টারকে জানান, কয়েকমাস আগে সহজেই ওএমএস দোকান থেকে চাল-আটা কেনা যেতো। কিন্তু এখন অনেক ভিড় বেড়েছে। এ কারণে মাঝেমধ্যে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'হামরাগুলা খুব অভাবোত পড়ি গ্যাইছি। এ্যাদোন অভাব গেল ৩ যুগেও দ্যাখোং নাই। হামরাগুলা সংসার চালবারে পাবার নাইছোং না। সোককিছুর দাম খালি বাইরবারে নাইকেছে। দাম একবার বাইরলে আর কমার নাম নাই। এ্যাং করি কি আর হামারগুলার জীবন বাঁচে।'

খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় ৪৯ জন ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪৩ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ মেট্রিক টন আটা বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটে ২১ জন ডিলারের দোকানে প্রতিদিন ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ৫ মেট্রিক টন আটা বিক্রি করা হচ্ছে। কুড়িগ্রামে ২৮ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ২৮ মেট্রিক টন চাল ও ৯ মেট্রিক টন আটা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রত্যেক সুবিধাভোগী পরিবার সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা কিনতে পারছেন। ওএমএস দোকানে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা আর প্রতি কেজি আটা ২৪ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এসব ওএমএস দোকান থেকে প্রতিদিন ১৪ হাজার পরিবার ন্যায্যমূল্যে চাল-আটা কিনছেন।

লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ী এলাকায় ওএমএস দোকানের ম্যানেজার মিলন রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা যে পরিমাণ সুবিধাভোগীর জন্য চাল-আটা বরাদ্দ পান তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সুবিধাভোগী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। দোকান সকাল ৯টায় খোলা হলেও ভোর থেকে লোকজন দোকানের সামনে অবস্থান করেন।

তিনি বলেন, 'আমরা সকলের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। অনেক মানুষ চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান। সরকার ওএমএস দোকানে বরাদ্দ বাড়ালে সুবিধাভোগীদের চাহিদা পূরণ করা যাবে।'

লালমনিরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ওএমএস দোকানগুলোতে সুবিধাভোগীদের ভিড় বেড়েছে অনেক বেশি। অনেক মানুষ চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। ডিলাররা বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আবেদন করছেন। ওএমএস দোকানে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

A budget without illusions

No soaring GDP promises. No obsession with mega projects. No grand applause in parliament. This year, it’s just the finance adviser and his unemotional speech to be broadcast in the quiet hum of state television.

7h ago