ত্বকী হত্যার ১০ বছর

খুনিরা সরকার ঘনিষ্ঠ হলে বিচার হয় না: আনু মুহাম্মদ

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচারকাজ 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে' থেমে আছে বলে অভিযোগ করেছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের নেতারা। 

একইসঙ্গে কী কারণে প্রধানমন্ত্রী ত্বকীর হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়েছেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা।

আজ শুক্রবার বিকেলে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার দশক পূর্তিতে শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। 

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'এ দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মাফিয়াদের আক্রমণে অনেকে নিহত হয়েছেন। অনেক জায়গায় আন্দোলন নানা কারণে ধরে রাখা যায়নি। কিন্তু এই নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ত্বকী হত্যার আন্দোলন এখন পর্যন্ত চলমান। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শাস্তির মুখোমুখি হয়নি বরং আন্দোলনকারীদের অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে। হুমকি দিলেও তারা জানে, যেকোনো দিন তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এই আতঙ্কে তারা সবসময় থাকে। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি অব্যাহত আন্দোলন খুনিদের ব্যাপারে মানুষকে বার বার মনে করিয়ে দেয়। ত্বকীকে কারা খুন করেছে, তা মানুষের স্মৃতিতে গেঁথে গেছে।'

'সাগর-রুনি, তনু হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তও হয়নি। কিন্তু ত্বকী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হয়েছে, আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্বকী হত্যার বিচারকাজ থেমে আছে। তিনি নিজে এই বিচারকাজ থামিয়েছেন, তা আমরা সবাই জানি। খুনিরা শক্তিশালী হলে বা সরকার ঘনিষ্ঠ কেউ হলে তার কোনো বিচার হয় না। এখানেও তাই হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কেন ত্বকীর খুনিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সে প্রশ্ন তুলে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'ত্বকী একজন মেধাবী কিশোর ছিল। অল্প বয়সে সে কবিতা, গদ্য লিখতো, ছবি আঁকতো। সে একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে বড় হচ্ছিল। সেই ত্বকীকে যারা হত্যা করল, তাদেরও আমরা সবাই চিনি। তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বিভিন্ন কারণে মানুষকে খুন করে শীতলক্ষ্যা নদীকে লাশের নদীতে পরিণত করে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন, আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিশালী একজন নাগরিককে যারা হত্যা করে তাদের পাশে তাদের রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেন কী কারণে? এই কারণটা আমাদের বোঝা দরকার।'

সরকার জনগণের বাইরে গিয়ে সন্ত্রাস, দখলদার ও টেন্ডারবাজদের ওপর ভরসা করে টিকে আছে বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। 

তিনি বলেন, 'খুনিদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, 'যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম করা হয়েছিল, সেই পরিবেশ এখনো এ দেশে তৈরি হয়নি। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর বাবা-মা-ছোট ভাইসহ সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল। দেশে ফিরে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করলেন। প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, ছোট রাসেল হত্যার বিচার আপনি করলেন, তাহলে ত্বকীর হত্যাকারীরা কেন ছাড় পাবে?'

তিনি বলেন, 'ঐতিহাসিক শহর নারায়ণগঞ্জ যখন একটি পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে যায় তখন আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। একটি পরিবার চাইলে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে- এটা চলতে দেওয়া যায় না। স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আজীবন টিকে থাকে না। এর পতন হবেই।'

সংগঠনের আহ্বায়ক ও ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, 'আড়াই মাসের মধ্যে কে, কোথায়, কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করেছে তা উদঘাটন করে পুলিশ। পরে র্যাব তৈরি করে রাখা অভিযোগপত্র আর দাখিল করেনি। র্যাব জানিয়েছিল, ত্বকীকে আজমেরী ওসমানের টর্চারসেল উইনার ফ্যাশনে রাত ৯টায় নেওয়া হয়। কিন্তু ত্বকী অপহরণ হয় বিকেলে। বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ত্বকী কোথায় ছিল, সেই তদন্তও প্রয়োজন।'

'১৬৪ ধারায় এক আসামি আজমেরী ওসমানসহ অন্যদের নাম প্রকাশ করে। কিন্তু আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করে তার জবানবন্দি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছি ১০ বছর ধরে। এ কারণে অনেক হুমকি-আক্রমণ এসেছে, কাজ হয়নি। আমরা নারায়ণগঞ্জকে খুনিদের আস্ফালন থেকে মুক্ত করব', বলেন তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম এবং ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে চাষাঢ়া থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Army chief reaffirms Bangladesh’s commitment to UN peacekeeping

"As Bangladesh's senior-most peacekeeper, I feel proud and honoured to be here today"

14m ago