প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি ভালো হয় না: মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে নাকচের পরে এবার খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান। 

তিনি বলেন, 'সুচিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম খালেদা জিয়া দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সংবিধানে তাকে বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। প্রকৃতপক্ষে দেশনেত্রীকে সংবিধানে দেওয়া চিকিৎসা সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে যা অন্যায়, অমানবিক ও অসাংবিধানিক।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা মনে করি, অসুস্থ এবং দেশে চিকিৎসা অসম্ভব হওয়া সত্ত্বেও একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই। সরকার হীন উদ্দেশ্যে আইনের দোহাই দিয়ে চিকিৎসা থেকে দেশনেত্রীকে বঞ্চিত রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা পুনরায় সরকারকে বলব, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি কখনো ভালো হয় না। তাই যত দ্রুত সম্ভব দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে একজন নাগরিক হিসেবে তাকে চিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক।'

'অন্যথায় একজন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় প্রবীন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার না দিয়ে তার প্রতি বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

সরকার বিদেশে যেতে দেবে না বলেছে, এ অবস্থায় দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'খালেদা জিয়ার যারা চিকিৎসা করছেন এটা তাদের বিষয়। চিকিৎসকরা এখানে যতদূর পারা যায় বেস্ট ট্রিটমেন্ট দেওয়া যায় সেটাই করবেন, করছেনও।'

তিনি বলেন, 'আমরা তো জোর করে তাকে নিয়ে চলে যেতে পারব না বিদেশে। আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব না। আমরা এখানে যা আছে সেই চিকিৎসা করিয়ে যাব এবং আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে এবং খালেদা জিয়ার তখন উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।'

'দৃষ্টান্ত অনেক'

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য খণ্ডন করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সত্য হলো রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তৎকালীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। একইভাবে ১৩ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে ১-১১'র সরকার ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ রকম দৃষ্টান্ত আরও আছে।'

তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনাও বিদেশে চিকিৎসার এমন সুযোগ ব্যবহার করেছেন ২০০৮ সালে। জরুরি আইনের সরকারের সময়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজি মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তাকে। অসুস্থতার কথা বলে তিনি মুক্তির ২-৩ দিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন একজন ওয়ারেন্টি আসামি হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন ওয়ারেন্টে আসামি থাকা অবস্থায়। সুতরাং আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।'

এ অবস্থায় কী করবেন, এমন প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে যাব, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাব। এরপর যদি কেউ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয় সেই বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করব।'

তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনার বক্তব্য তো আপনারা শুনেছে। তিনি তো দেবেন না বলেছেন। তারপরও আমরা আপিল করছি শুভবুদ্ধির কাছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকেও তো বলা হয়েছে যে, কোনো শর্তসাপেক্ষে উনি বিদেশে যাবেন না।'

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Unveil roadmap or it’ll be hard to cooperate

The BNP yesterday expressed disappointment over the absence of a clear roadmap for the upcoming national election, despite the demand for one made during its recent meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus.

7h ago