খরচ কমানোর স্মার্ট উপায় ‘স্লো শপিং’

অলঙ্করণ: বিপ্লব চক্রবর্তী

বর্তমানে টিকটক, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ হুটহাট খরচ করে ফেলছে। আঙুলের স্পর্শে মুহূর্তেই কেনাকাটায় খরচ হয়ে যাচ্ছে বড় অংকের টাকা। এই প্রবণতায় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু মনে হয় না। কিন্তু মাস শেষে ঠিকই আফসোস করতে হয়।

এ ধরনের প্রলোভন থেকে বের হতে অনেকে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যাবে বলা হচ্ছে, 'স্লো শপিং'।

স্লো শপিং কী?

হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্লো শপিং মূলত এক ধরনের আর্থিক অভ্যাস। এই প্রবণতা ভোক্তাকে খরচ কমাতে ও কেনাকাটায় আরও সচেতন হতে শেখায়। অর্থাৎ ভোক্তা কী কিনছেন, কেন কিনছেন এবং কত খরচ করছেন, তা মনোযোগ দিয়ে ভাবতে শেখায়।

মানে কিছু কিনতে ইচ্ছে হলো তাৎক্ষণিকভাবে না কিনে, ধীরে ও সময় নিয়ে ভেবে কেনাই হলো স্লো শপিং।

এই প্রক্রিয়ায় পরিমাণের চেয়ে গুণমানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে ভোক্তা বাজেট ও আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেন এবং কেনাকাটাকে 'বিনিয়োগ' হিসেবে বিবেচনা করেন। এতে কেনাকাটার পর আফসোস কমে এবং বেশি সঞ্চয় করা সম্ভব হয়।

স্লো শপিংয়ের সুবিধা

স্লো শপিং ভোক্তাকে আকস্মিক কেনাকাটা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই প্রবণতা কেনাকাটার জন্য সময় দেয় ও দাম মূল্যায়ন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এমনকি কিছু কেনার জন্য দরকারি অর্থ সঞ্চয় করতেও সহায়তা করে। এতে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করতে হয় না এবং ঋণের বোঝা বাড়ে না।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়ে। ফলে তখন তারা অনেক কিছুতে বেশি খরচ করতে শুরু করেন। বিশেষ করে, যেগুলোকে একসময় অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা মনে করতেন, সেগুলোতে অর্থ ব্যয় করেন। অর্থনীতির ভাষায় একে বলা হয়, 'লাইফস্টাইল ক্রিপ'।

সামাজিকমাধ্যমের যুগে এ খরচের ধারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ সহকর্মী বা বন্ধুদের বিলাসী সামগ্রী ও অভিজ্ঞতা দেখে এগুলোকে এক ধরনের অধিকার মনে হতে শুরু করে। তখন ভোক্তা এগুলোতে অর্থ ব্যয় করেন।

মার্কিন প্রতিষ্ঠান ব্রেড ফিন্যান্সিয়ালের জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ জে-জি গ্রাহক বলেছেন, তারা অনলাইন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ করেন। ৭৯ শতাংশ বলেছেন, সামাজিকমাধ্যম তাদের কেনাকাটায় প্রভাব ফেলে। এতে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বাড় ও অপচয় হয়।

সামাজিকমাধ্যমের এই প্রভাব চক্র থেকে মুক্তি পেতে স্লো শপিং সহায়ক হতে পারে। কারণ ভোক্তার কষ্টে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার।

স্লো শপিংয়ের অভ্যাস গড়ে তুলবেন কীভাবে

'পে নাউ' অপশনে ক্লিক করার আগে বা কোনো কিছু কেনার আগে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করতে হবে। কী সেই প্রশ্ন? 'আমি কেন এই পণ্য কিনছি?' 'এটি কি আমার সত্যিই দরকার?'

নিজেকে বারবার এভাবে প্রশ্ন করলে বাড়তি খরচের প্রবণতা কমে আসবে। তখন অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। দিন শেষে ভোক্তার সঞ্চয় বাড়বে। কিংবা অন্য কোনো দরকারি খাতে এই অর্থ ব্যয় করতে পারবেন।

আছে অসুবিধা!

যদিও স্লো শপিং থেকে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তবে এই ধারণাটির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। কারণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিশেষ করে ভোক্তা যদি অতিরিক্ত চিন্তাশীল হন। এতে সীমিত সময়ের জন্য দেওয়া সেল বা বিশেষ অফার মিস হতে পারে, যা শেষমেশ খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।

আবার অনেক পণ্যের স্টক সীমিত থাকে। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে নিতে পণ্যটির স্টক শেষ হয়ে যেতে পারে। ফলে দরকারি জিনিসটি আর সময়মতো সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।

তাই স্লো শপিংয়ের চর্চা কখনো কখনো অযথা সময়ক্ষেপণ করতে পারে। এজন্য ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে শুরু করবেন স্লো শপিং

স্লো শপিংয়ের মাধ্যমে খরচের অভ্যাস উন্নত করা, অযথা খরচ ও অপচয় কমানো সম্ভব। তবে অনেকেই বুঝতে পারেন না, কীভাবে শুরু করবেন।

কেউ যদি স্লো শপিং শুরু করতে চান, তাহলে একটি নির্দিষ্ট খাত দিয়ে শুরু করতে হবে। যেমন পোশাক, প্রসাধনী বা মুদি সামগ্রী। এজন্য প্রথমে কেনাকাটার তালিকা তৈরি করতে হবে, তারপর তা মূল্যায়ন করতে হবে এবং পর্যালোচনা করতে হবে। এরপর দাম তুলনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন জিনিসটি কেনা প্রয়োজন এবং কেন প্রয়োজন।

প্রাথমিকভাবে সব খরচের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার দরকার নেই।

কেউ চাইলে ৪৮ ঘণ্টার নিয়ম মেনে চলতে পারেন। মানে যখন কিছু কিনতে ইচ্ছে হবে, ওই সময় থেকে দুই দিন অপেক্ষা করতে হবে এবং তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই ৪৮ ঘণ্টার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। এছাড়া তাৎক্ষণিক যে চাপ তৈরি হয়, তা কমাতে সহায়তা করবে। এতে সত্যিই জিনিসটি প্রয়োজন কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

Comments