আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

যে তিন জায়গায় নির্ভর করছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের ভাগ্য

ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের ফল লিখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে- এরকমই তিনটি লড়াইয়ের জায়গা দেখে আসি চলুন।

যে তিন জায়গায় নির্ভর করছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের ভাগ্য

Bangladesh vs India

এগার বনাম এগার। খাতায়-কলমে এমন হলেও লড়াইটা তো ঠিক এভাবে হয় না। আর একটা ম্যাচে কি সব ধরনের লড়াই-ই সমান প্রভাব ফেলে? কিছু কিছু আলাদা লড়াই থাকে, যেগুলো ম্যাচের ভাগ্য অনেকাংশেই নির্ধারণ করে দেয়। বিশ্বকাপে বৃহস্পতিবার পুনেতে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের ফল লিখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে- এরকমই তিনটি লড়াইয়ের জায়গা দেখে আসি চলুন।

বাঁহাতি পেসাররা হতে পারবেন ভারতের ত্রাস?

সুইংময় কন্ডিশনে ডানহাতি ব্যাটারদের জন্য বাঁহাতি পেস সবসময়ই হুমকি। মোস্তাফিজুর রহমানের ইনসুইং এখনও ধারালো হয়নি। সাম্প্রতিককালে ইনসুইংয়ে ভালোই দক্ষতা দেখিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ভারতে এত মুভমেন্ট দেখা যায়নি। তবে দুই বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটারদের লড়াইটা ম্যাচে অনেক বড় প্রভাব রাখবে নি:সন্দেহে। বাঁহাতি পেস ভারতের ব্যাটারদের সামনে ভালোই অস্ত্র।

বিশ্বকাপে শাহিন আফ্রিদি ও ফজলহক ফারুকীর উপর সর্দারি করেছেন রোহিত শর্মা। তার আগে দেখা গেছে- ২০২১ সাল থেকে বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত সময়ে ছয়বার আউট হয়েছেন। বাঁহাতি পেসে ব্যাটিং গড়টাও ২৯ এর বেশি ছিল না রোহিতের। আরেক ওপেনার শুবমান গিলের রেকর্ড যদিও দুর্দান্ত। একই সময়ে ডানহাতি ওপেনারের গড় প্রায় ৬১। তবে ২০২১ সাল থেকে বাঁহাতি পেসের বিরুদ্ধে যে হিসাব, তাতে বিরাট কোহলির গড়টা ত্রিশের উপরে যায়নি।

ভারতের আরও কয়েক ব্যাটারের বাঁহাতি পেসে অস্বস্তি আছে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে হার্দিক পান্ডিয়া বাঁহাতি পেসে খেলেছেন ১৯.২ গড়ে। আর রবিন্দ্র জাদেজার গড়ও বিশের উপরে যায়নি। জাদেজার বিরুদ্ধে মোস্তাফিজের রেকর্ডটাও দুর্দান্তের চেয়েও বেশি কিছু। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, আইপিএলে- সব দেখায় ৫৩ বলে ৪৮ রান দিয়ে জাদেজাকে সাতবার আউট করেছেন মোস্তাফিজ।

বিগত সময়ে বাংলাদেশের পেসাররাই বড় শক্তি হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে এসে নিজেদের চেনা রূপটা মেলে ধরতে পারছেন না তারা। তিন ম্যাচ মিলে বাংলাদেশের পেসাররা পাওয়ারপ্লেতে একটা উইকেটই নিতে পেরেছেন চলতি বিশ্বকাপে। পাওয়ারপ্লেতে ভারতের টপ অর্ডার রুখতে হলে জ্বলে উঠতে হবে দুই বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ ও শরিফুলকে। রোহিত-গিলের ওপেনিং জুটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে ম্যাচ ছিনিয়ে নিতে পারে অনায়াসে। দুজনে এ পর্যন্ত ১৪ বার জুটি বেধে ৯ বারই পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন। ডানহাতি জুটির ব্যাটিং গড় ৮২। বাংলাদেশকে ম্যাচে এগিয়ে যেতে তাই পাওয়ারপ্লেতে অসাধারণ কিছুই করতে হবে।

কুলদীপকে কুলিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে কান পাতলেই শোনা যায় লেগ স্পিনের হাহাকার। লেগ স্পিনে দুর্বলতা তাই অজানা কথা নয়। সেদিনই ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচে টিভির পর্দায় দেখিয়েছিল একটা পরিসংখ্যান। সেখানে দেখা গেল, লেগ স্পিনে বাংলাদেশের ব্যাটিং গড় ৩০.০৮, যা বিশ্বকাপের দলগুলোর মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন।

ভারত ম্যাচে কুলদীপ যাদবের বিপক্ষে কেমন করে বাংলাদেশ, সেটা তাই অনুমিতভাবেই বড় ফ্যাক্টর। একে তো লেগ স্পিনে অনভ্যস্ততা, তার ওপর কুলদীপের ফর্ম- পুনেতে স্পিনিং পিচ না হলেও কুলদীপের মতো রিস্ট স্পিনার তাই বড়সড় ভয়ের কারণ। ২০২২ সাল থেকে বিশের কম গড়ে কমপক্ষে ২০ উইকেট নেওয়া একমাত্র স্পিনার কুলদীপ। ২৭ ইনিংসে ৫০ উইকেট নিয়েছেন ১৯.৫৮ গড়ে।

ছন্দে থাকা কুলদীপের বড় শক্তি তার কন্ট্রোল। লাইন-লেংথে একটুও হেরফের না করা কুলদীপের থেকে রান সহজে পাওয়া মুশকিল তাই। লেগ ব্রেক ও গুগলি, দুটিতেই সমান দক্ষ বলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। বাংলাদেশ দলে মুশফিকুর রহিম স্পিনে সবচেয়ে ভালো, সাকিব-তামিমও অতটা অস্বস্তিতে থাকেন না। লেগ ব্রেকে তিনজনেরই গড় ত্রিশের উপরে। তবে দুই তরুণ হৃদয় ও শান্ত বিশের কম গড়ে ব্যাট করেছেন লেগ স্পিনে।

লেগ স্পিনে দুর্বলতা দূরীকরণেই বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ক্যাম্পে বাংলাদেশ রেখেছিল এক বাঁহাতি চায়নাম্যানকে। কারাপাক জিয়াস নামের সে বোলারকে বিশ্বকাপেও নেট বোলার হিসেবে সঙ্গে রেখেছে বাংলাদেশ। এবার দেখা যাক, কুলদীপকে কতটা কুলিয়ে উঠতে পারে টাইগাররা।

বুমরাহ-সিরাজ বনাম বাংলাদেশের ভঙ্গুর ওপেনিং

জাসপ্রতি বুমরাহর মান নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। বিশ্বকাপে তো আছেন ভরপুর ফর্মে। এ পর্যন্ত হওয়া ভারতের তিন ম্যাচের দুটিতেই হয়েছেন ম্যাচ সেরা। ৮ উইকেট তো নিয়েছেনই, ২৭ ওভার করে রানও দেননি একশের বেশি। কিপটে বোলিংয়ে সঙ্গে উইকেট নেওয়ার দক্ষতা- বুমরাহ যে বাংলাদেশ ম্যাচেও মহাগুরুত্বপূর্ণ, তা আর বলে দিতে হয় না। টানা দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছেন, এবার আর হবেন না! এমন কিছুতে বিশ্বাস যদি করেও ফেলেন, মোহাম্মদ সিরাজের হুমকিও কম বড় নয়।

আগ্রাসী লেংথে সিরাজের চেষ্টা সব সময়ই থাকে উইকেট পাওয়ার। ম্যাচে এগিয়ে যেতে প্রথম পাওয়ারপ্লে জয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আর বাংলাদেশের সবচেয়ে দুশ্চিন্তার জায়গা সেখানেই। ওপেনিং জুটিতে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের গড় ৩১.৫৫। বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। আর সর্বোচ্চ কাদের জানেন? ওই ভারতেরই, ৬৭.৮১।

শুরুতে দুই দলের ভিন্ন রকমের দুই পাওয়ারপ্লেই ম্যাচের ভাগ্য একদিকে ঠেলে দিতে পারে। হাই-স্কোরিং ভেন্যু পুনেতে বাংলাদেশ যদি বাজিমাত করতে পারে, তবে হয়েই যেতে পারে ভারতবধ।

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

3h ago