সুনামগঞ্জে নদনদীর পানির উচ্চতা ছাড়াতে পারে আগের সব রেকর্ড

ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সিলেট ও সুনামগঞ্জে আগামী ৩ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং অন্তত ৭ দিন বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এতে সিলেট বিভাগের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ সহজে শেষ হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছেন তারা।

আবহাওয়াবিদদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উজানে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ৭২ ঘণ্টায় প্রায় ২৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময়ে সিলেট বিভাগে গত ২৭ বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগে ও পার্শ্ববর্তী ভারতের রাজ্যগুলোতে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ ও সিলেটের ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সোমবার পর্যন্ত পানির স্তর বাড়তে থাকবে। আশা করি এরপর থেকে পানি কমতে শুরু করবে।'

'এ কারণে সিলেট বিভাগে অন্তত আগামী ৭ দিন বন্যা অব্যাহত থাকবে,' যোগ করেন তিনি।

নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের সড়ক-মহাসড়ক। ছবি: সংগৃহীত

এই আবহাওয়াবিদ জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগামী দুয়েকদিনে সুনামগঞ্জের নদনদীর পানির উচ্চতা আরও ১ মিটার এবং সিলেটে অন্তত ৫০ সেন্টিমিটার বাড়তে পারে।

পুরো অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আবহাওয়াবিদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, 'মৌলভীবাজারের মহেশখোলায় ৪০৭ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ৩৭৫ মিলিমিটার, জাফলংয়ে ২৬৮ মিলিমিটার এবং রংপুর, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম এলাকায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।'

'কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। সেখানে সবচেয়ে বেশি ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর দ্বিতীয় আর্দ্র স্থান চেরাপুঞ্জিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি গত ২৭ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই এলাকায় তৃতীয় সর্বোচ্চ ভারী বৃষ্টিপাত।

এর আগে, গত ১৪ জুন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১৫ জুন সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেখানে ৮১১ দশমিক ৬ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। আর গত বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭০০ মিলিমিটার।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের ভেতর দিয়ে ভাঁটিতে আসছে, যে কারণে সেখানকার পরিস্থিতি  আরও খারাপের দিকে গেছে।'

তিনি বলেন, 'সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেখা গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আগামী ২ দিনের মধ্যে তা সুনামগঞ্জের পানির সর্বোচ্চ স্তরের  রেকর্ড অতিক্রম করবে।'

সুরমা নদীতে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পানির স্তরের (গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে) রেকর্ড ৯ দশমিক ২৯ মিটার। বর্তমানে সুনামগঞ্জের সুরমায় পানির স্তর ৮ দশমিক ৮৭ মিটার।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda leaves London for Dhaka in air ambulance

Fakhrul urges BNP supporters to keep roads free, ensure SSC students can reach exam centres

10h ago