অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ইতিহাসে প্রথম হিজাব পরা সিনেটরের বক্তৃতা

ফাতিমা পেম্যান। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টের ১২১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম হিজাব পরা এক মুসলিম নারী আজ বুধবার সিনেটর হিসেবে বক্তব্য রাখলেন।

২৭ বছর বয়সী ফাতিমা পেম্যান গত ২১ মে ফেডারেল নির্বাচনে লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন। তিনি পার্লামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ও নির্বাচিত প্রথম আফগান-অস্ট্রেলিয়ান।

ফাতিমা কৈশোরে বাবা-মায়ের সঙ্গে শরণার্থী হিসেবে আফগানিস্তান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন।

তাকে পার্লামেন্টের গভর্নর জেনারেল ডেভিড হার্লির বক্তৃতার জবাব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটি ঐতিহ্যগতভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের এজেন্ডার রূপরেখা দেয়।

ফাতিমা পেম্যান গর্বিত হয়ে হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নেওয়া মেয়েদের উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, 'যারা বাহ্যিক দিক দেখে আমার কী পরা উচিত বা আমার যোগ্যতার বিচার করতে চান তারা জেনে রাখুন যে হিজাব আমার পছন্দ।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ১০০ বছর আগে অথবা ১০ বছর আগেও কি এই পার্লামেন্ট হিজাব পরা নারীর নির্বাচিত হওয়া মেনে নিতো? এই পার্লামেন্ট অস্ট্রেলিয়ার "সত্যিকারের বৈচিত্র্য" প্রতিফলিত করতে শুরু করেছে।'

ফাতিমা আবেগপ্রবণ বক্তৃতায় প্রয়াত বাবার ত্যাগের কথা স্বীকার করে বলেন, 'বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। তার আত্মত্যাগ কখনই ভোলা যাবে না। তিনি বেঁচে থাকলে দেখতেন, তার ছোট্ট মেয়ে কতদূর এসেছে।'

ফাতিমার বাবা নিরাপত্তা প্রহরী ও ট্যাক্সিচালক হিসেবে দিনের দীর্ঘ সময় কাজ করতেন। মা ড্রাইভিং শিক্ষা দেওয়ার ছোট ব্যবসা চালানোর পাশাপাশি পরিবারের দেখাশোনা করতেন।

ফাতিমা পার্থের উত্তর শহরতলিতে বাবা-মা ও ৩ ভাইবোনের সঙ্গে শৈশবে কাটান।

ছোটবেলায় বাবা-মায়ের কঠোর পরিশ্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে ফাতিমা ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সংগঠক হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তার বাবা লিউকেমিয়ায় মারা যান। তখন ফাতিমা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি বাবার মতো কঠোর পরিশ্রমী অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

সিনেটর ফাতিমা বলেন যে, তিনি তরুণ ও প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে 'আধুনিক অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি'।

বক্তৃতায় তিনি প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন সরকারের অগ্রাধিকারের ওপরও আলোকপাত করেন। এর মধ্যে রয়েছে বয়স্কদের যত্ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ, শিশুর যত্ন, সংবিধানে আদিবাসী কণ্ঠস্বর অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি।

ফাতিমা সংসদে বলেছেন, 'আপনি যেখানেই জন্ম নেন না কেন, আপনি যে কোন রাজ্য বা অঞ্চল থেকেই আসুন না কেন, আপনি কী পরতে পছন্দ করেন, আপনি কাকে বিশ্বাস করতে চান তা এখন কোনো বিষয় নয়। জেনে রাখুন, অস্ট্রেলিয়া এমন জায়গা যেখানে আপনি ঐক্যবদ্ধ সমষ্টির অংশ হতে পারেন।'

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
chocolate trend in Bangladesh

Mimi, nostalgia and new bites

Local, global brands offer treats for all budgets, with young people driving the demand

12h ago