আলাস্কার বিশাল সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, মুহূর্তে তছনছ করতে পারে চারপাশ

ছবি: সায়েন্স নিউজ

আলাস্কার অ্যালেউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের গভীরে হয়তো লুকিয়ে আছে এক মহাশক্তিশালী আগ্নেয়গিরি! যার বিস্ফোরণ মুহূর্তেই তছনছ করে দিতে পারে চারপাশ। 

এমনটি জানিয়েছেন, জন পাওয়ার। যিনি আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তিনি মূলত আগ্নেয়গিরি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। 

জনের মতে, 'এই আগ্নেয়গিরি অতীতেও বিস্ফোরিত হয়েছিল। এর ফলে সৃষ্ট বিশালাকৃতির গহবর যুক্ত করেছে আরও ৪টি পর্বতকে। এগুলোর ভেতরেও লুকিয়ে আছে আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভা। একবার কোনোভাবে বিস্ফোরিত হলেই যা নাড়িয়ে দেবে পুরো পৃথিবীর ভিত।'

ছবি: সায়েন্স নিউজ

তবে, কার্নেগি ইনস্টিটিউশন ফর সায়েন্সের ডায়ানা রোমান আবার বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, 'এই বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া কিছু সূত্র জুড়ে দিয়ে একটি উপসংহার টানার চেষ্টা চলছে। আসলে ৪টি পর্বতের যে কথা বলা হয়, তা অনেকটা পৌরাণিক কাহিনীর মতো শোনায়। প্রকৃতপক্ষে, এখানে আগ্নেয়গিরি আছে ৬টি যারা সবাই মিলে একটি সাধারণ ক্লাস্টার তৈরি করেছে। সোজা কথায়, এখানে একটা বিশাল গর্ত দিয়ে সবগুলো যুক্ত বা সেখান থেকেই সব উদগীরণ হবে- এমন নয়।'

তবে সব তথ্য জোড়া দিয়ে দেখা যায়, সেখান থেকে বিশ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে  সত্যিই একটি সুবিশাল গর্ত আছে! ১৯৫০-এর দশক থেকে বাথিমেট্রি (সমুদ্রের গভীরতা মাপার একটি পদ্ধতি) ব্যবহার করে এর সামগ্রিক ম্যাপিং করা হয়। এতে দেখা যায়, পাহাড়গুলোর সরু চূড়া কিছুটা বলয় আকৃতির, সবগুলো মিলে একটি আংটার মতো তৈরি করেছে। আগ্নেয়গিরির এই আংটার কেন্দ্রে ১৩০ মিটার গভীর খাদ রয়েছে। এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই সব সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সেই গর্তের মাধ্যমে; যা বহু বছর আগে একটি ম্যাগমা প্রকোষ্ঠের প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয়।

ক্যালডেরা। ছবি: সংগৃহীত

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যগুলোও জানান দিচ্ছে অন্যান্য এমন গর্তগুলোর অবস্থা। যেন তারা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। আবার, সালফার-ডাই অক্সাইডের মতো দাহ্য গ্যাসের উপস্থিতি ও স্বল্পমাত্রার ঘন ঘন ভূমিকম্পও জানান দিচ্ছে বিশাল কোনো গহ্বরের উপস্থিতির কথা। 

ডায়ানা রোমান বলেছেন, 'ছোট ছোট এসব ভূমিকম্পে আমরা অবাক হচ্ছি না। এখানকার অন্যতম বড় একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হলো ক্লেভল্যান্ড পর্বত। এর আশেপাশে পূর্বে ও উত্তরে এই স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পগুলো ছড়িয়ে যায়, শুধু পর্বতসংলগ্ন ভূমিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর ফলে সুবিশাল কোনো গহ্বরের অস্তিত্ব আরও বেশি টের পাওয়া যায়।'

এ ধরনের গহ্বরগুলোর একটি বিশেষ শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো, এদের রিমে থাকা সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলো যা মূলত একই ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে উৎসারিত। এই ব্যাপারটি ক্লেভল্যান্ড পর্বতের সঙ্গে মেলে।   

আগ্নেয়গিরির ভূতাত্ত্বিক গঠন। ছবি: সংগৃহীত

জন পাওয়ার বলছেন, 'এটি ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০-৭০ বার অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে। এরকম অগ্নুৎপাত এত বেশি ওপরে ছাই নিয়ে যায় যে আকাশে বিমান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এই আগ্নেয়গিরিগুলোর জন্য এটি খুব স্বাভাবিক ও প্রতিনিয়ত ঘটা একটি ঘটনা। এর একটি ভালো উদাহরণ ইন্দোনেশিয়ার রিনজিনি আগ্নেয়গিরি। ১২৫৭ সালে এর অগ্নুৎপাতের ফলে পৃথিবীতে সালফার-ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমে যায়। ফলে পৃথিবী আগের চেয়ে শীতল হয়ে পড়ে।'

এসব তথ্যকে যুক্ত করে একজায়গায় আনা বেশ কঠিন ব্যাপারই ছিল। তবে জায়গাটায় চলাচল সহজ হওয়ায়, পানির নিচে কাজের জন্য ভালো প্রযুক্তি সহায়তা পাওয়ায় ও আগ্নেয়গিরির আগের সব অবশেষ মুছে নতুন বর্জ্য তৈরি হওয়ায় তাদের গবেষণা অনেক সহজ হয়েছে। 

ডায়ানা রোমান মনে করছেন, 'বিভিন্ন রকম নিরীক্ষণে বিভিন্ন রকম সম্ভাবনার কথা বলছে। তবে মাঝে থাকা বিন্দুর মতো কিন্তুগুলো সবসময় জোড়া লাগছে না। তারপরও চেষ্টা করছে আমাদের দল। একেবারে সোফার কুশন সরিয়ে নিচে দেখার মতো করে আদাজল খেয়ে লেগেছে ওরা সবাই।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Protesters set Nepal parliament on fire

Hundreds have breached the parliament area and torched the main building, a spokesman for the Parliament Secretariat says

1h ago