ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান ইউনিয়ন ব্যাংকের

ইউনিয়ন ব্যাংকে ২০২৪ সালে ২৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এক বছরে কোনো ব্যাংকে এটাই সর্বোচ্চ লোকসান।

গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৪৮ টাকা ৯০ পয়সা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির লোকসান ছিল ২৯২ কোটি টাকা, আর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৮২ পয়সা।

এ খাতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এ ছাড়া এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকার বেশি করে লোকসান দিয়েছে।

গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতের দুর্দশার চিত্র স্পষ্ট হতে শুরু করে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসে।

২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের মোট ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকাই ছিল ইউনিয়ন ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই চট্টগ্রামকেন্দ্রিক।

ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যার প্রায় অর্ধেকই সাধারণ বিনিয়োগকারীর। বিপুল লোকসানের কারণে ব্যাংকটির আর্থিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যার বড় অংশই এখন ঝুঁকির মুখে।

চট্টগ্রামের দোকানদার ইকবাল হোসেন তার বাড়িতে গরুর খামার করার স্বপ্ন নিয়ে চার বছর ধরে একটি ডিপিএস স্কিমে মাসে ২ হাজার টাকা করে জমিয়েছিলেন।

গত জুনে স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হলে তিনি টাকা তুলতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। তিনি বলেন, তারা জানায়, প্রতিদিন ১ হাজার টাকা করে তোলা যাবে। কিন্তু, ১৩ দিন পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।'

এখন তিনি ব্যাংকটির একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। একীভূত হওয়ার পর আমানতকারীরা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউনিয়ন ব্যাংক ২০১৩ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসে। ২০২০ সালে সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি ব্যাংকটির ভাইস-চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংকে ফরেনসিক নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়। নিরীক্ষার দায়িত্ব পায় যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি। তাদের প্রতিবেদনে ইউনিয়ন ব্যাংকের চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে আসে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯৭.৮ শতাংশ।

পরে 'ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫'–এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংকসহ দুর্দশাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। এ প্রক্রিয়া তদারকির জন্য একজন প্রশাসকও নিয়োগ করা হয়েছে।

একীভূত করার জন্য নির্বাচিত ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিএসইতে ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত হওয়ার আগে ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১ টাকা ৫০ পয়সা।

Comments