বাজেট কি লিঙ্গ বৈষম্য দূর করবে?

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দেশে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে এবারের বাজেট বক্তৃতায় তরুণ নারীদের পেশাগত ও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বারোপের ওপর জোর দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, ৮টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণে নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের 'গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২১' এ ১৫৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫ এবং এশীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। সেই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও সুবিধার অধিকারের ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানকে 'সন্তোষজনক' করতে সরকার কাজ করছে।

পেশাগত ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নারীর দক্ষতা উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। তবে, লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রের দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে।

রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন (দশমিক ৫৪৬ শতাংশ পয়েন্ট), শিক্ষাগত অর্জন (দশমিক ৯৫১), এবং স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার (দশমিক ৯৬২) সূচকে ন্যায্য স্কোর পাওয়ায় গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে আরও ভালো অবস্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

যখন অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগের কথা আসে, তখন এ খাতে বাংলাদেশের স্কোর দশমিক ৪১৮ শতাংশ পয়েন্ট।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল (দশমিক ৬৩০), ভুটান (দশমিক ৫৫৬), শ্রীলঙ্কা (দশমিক ৫৪৭) ও মালদ্বীপ (দশমিক ৪৯১) অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।

এ ছাড়াও, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হারের দিক থেকেও নেপাল (৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ), ভুটান (৬২ দশমিক ৩ শতাংশ) ও মালদ্বীপ (৪৩ দশমিক ১ শতাংশ) বাংলাদেশের (৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ) চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস। এ ছাড়া, সামগ্রিক লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে তাদের অবস্থান ৩৬ নম্বরে (স্কোর দশমিক ৭৫০)। সেখানে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ।

বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পেশাগত ও প্রযুক্তিগত কাজের ২৪ দশমিক ৪ শতাংশে ভূমিকা রয়েছে নারীর। তবে, এটি নেপালে ৩০ শতাংশ, ভুটানে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ, মালদ্বীপে ৫২ দশমিক ২ শতাংশ ও লাওসে ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ।

এ ছাড়াও, যেসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক নারী, লাওসে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ ব্যবস্থাপক পদে নারী, এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ।

বাংলাদেশে তা যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে, তবে, বাংলাদেশের মেয়েরা এখনো উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে কম অগ্রাধিকার পায়।'

'দক্ষতার সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীদের কর্মসংস্থানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। কারণ, যেহেতু ঘরের কাজও নারীদেরকেই করতে হয় এবং ফলে দক্ষতা অর্জনে তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়', যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, শহুরে বিন্যাস ছাড়াও অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে গ্রামীণ অঞ্চলে তরুণ নারীদের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন।

'এ ছাড়াও, কর্মজীবী মায়েদের জন্য কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ডে কেয়ার সেন্টারেরও প্রয়োজন', বলেন তিনি।

অধ্যাপক তানিয়া হক আরও বলেন, 'সমাজে এখনো একটি মানসিকতা রয়েছে যে, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি দক্ষ। জাতীয় বাজেটে যদি শুধু শহুরে এলাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়, তাহলে এই বৈষম্য থেকেই যাবে।'

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আরও ভালো সুযোগ সৃষ্টি করতে ঋণ ও কর প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা 'নমনীয়' হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন ঢাবির এই অধ্যাপক।

Comments

The Daily Star  | English

Sabalenka beats Anisimova to win second straight US Open title

The Belarusian has not missed a hardcourt major final since 2022 and her latest trophy brings her Grand Slam haul to four, as she became the first woman to win back-to-back US Opens since Serena Williams claimed three straight from 2012 to 2014

Now