ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে রওনা হয়েছে ঘরমুখো মানুষ। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে। আর ছুটি পেয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে ছুটতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। ট্রেনের ছাদে, দুই বগির মাঝে বসে, দরজায় ঝুলে ও ভেতরে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের।

আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় শহরের চাষাঢ়া রেল স্টেশনে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

স্টেশন সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৫০০-৬০০ যাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে আজ ট্রেনে প্রায় ৩ হাজার যাত্রী নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছে।

স্টেশনের কর্মকর্তাদের নিষেধ সত্ত্বেও যাত্রীরা তা মানছেন না।

নারী, পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের যাত্রীরা ট্রেনের ছাদে ওঠেন। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুরগামী সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের ট্রেন ঢাকা থেকে চাষাঢ়া প্লাটফর্মে আসে ৭টা ৪৫ মিনিটে। এর মধ্যেই নারী, পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের যাত্রীরা ট্রেনের ছাদে উঠতে শুরু করে।

এছাড়া দরজা দিয়ে ট্রেনে উঠতে না পেরে জানলা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

অনেকে সাড়ে ৮টার ট্রেনে উঠতে না পেরে বাস কাউন্টারের দিকে যেতে শুরু করেন।

ট্রেনের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিকেলে গার্মেন্টস, হোসিয়ারি কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছুটি হওয়ায় যাত্রী বেশি হচ্ছে।

স্টেশনের কর্মকর্তাদের নিষেধ সত্ত্বেও যাত্রীরা মানছেন না। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর যাওয়ার পর সেখান থেকে ট্রেনে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবেন তারা।

শহরের উকিলপাড়ায় হোসিয়ারি কারখানার কর্মী কাউসার আহমেদের সঙ্গে স্টেশনে দেখা হয়। তিনি দ্য ডেইলি বলেন, 'ট্রেনে কমলাপুর গিয়ে রাতের ট্রেনে পাবনা যাব। এজন্য সন্ধ্যা ৭টায় পরিবার নিয়ে স্টেশনে এসে বসে আছি। কিন্তু ট্রেন আসতে দেরি করছে। তাছাড়া টিকেটও কিনতে পারছি না। টিকেট শেষ হয়ে গেছে বলছে।'

তিনি বলেন, 'ট্রেনে প্রচুর যাত্রী উঠতে পারব কি না, বুঝতে পারছি না।'

ফতুল্লা বিসিক শিল্প এলাকায় ফোর ডিজাইন নামে গার্মেন্টসে কাজ করেন শাহ জামাল। তারা ৩ বন্ধু গ্রামের বাড়ি জামালপুর যাচ্ছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ থেকে ৯ দিনের ছুটি পেয়েছি। আগামীকাল থেকে যানবাহনে ভিড় বেশি হবে। তাই আজই বাড়িতে যাব।'

'ট্রেনের টিকেট পাইনি। প্রয়োজনে ছাদে উঠে চলে যাব। বাড়ি যাওয়ার খুশিতে ভয় লাগে না,' বলেন তিনি।

জনবল কম থাকায় তদারকি করতে পারেনি স্টেশন কর্তৃপক্ষ। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

পরিবার নিয়ে দিনাজপুর যাবেন আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, 'গার্মেন্টস ৭ দিনের ছুটি দিয়েছে। বাড়ি গিয়ে গরু কিনব। তাই আগেই চলে যাচ্ছি। প্রতি ঈদে এভাবেই কষ্ট করে যেতে হয়।'

গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ যাবেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবী সাইফুল ইসলাম। ট্রেনে উঠতে না পেরে তিনি বলেন, 'এতো ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে যেতে চাই না। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। আজকে না পারলে কাল যাবে।'

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার এস এম খাজা সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের ছুটির কারণে যাত্রী কয়েকগুণ বেশি। যেখানে দিনে ৪০০-৫০০ যাত্রী হয় সেখানে আজকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিকেট কেটেছে প্রায় ৩ হাজার যাত্রী।'

'আরো ৩ হাজারের মতো যাত্রী টিকেট না কেটে ট্রেনের ছাদে উঠে নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছে,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'ট্রেনের ছাদে উঠলে ঝুঁকি থাকে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমরা নিষেধ করছি। কিন্তু যাত্রীরা আমাদের কথা শুনছেন না। তাছাড়া লোকবল কম থাকায় সঠিক তদারকিও করা সম্ভব হয়নি।'

'তবে দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা ট্রেন ধীরগতিতে চালাতে বলেছি। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার খবর পাইনি,' যোগ করেন তিনি।

ট্রেন যথা সময়ে স্টেশনে না আসার বিষয়ে তিনি বলেন, 'ঢাকার গেন্ডারিয়ায় একটি ট্রাক রেললাইনের উপর এসে আটকে গিয়েছিল। ট্রেন বেশ কিছুক্ষণ থামিয়ে রাখায় শিডিউল ড্রপ হয়েছে। এখনো কিছু সময় দেরি হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Sugar, edible oil imports surge as dollar supply improves

Bangladesh’s imports of key essential commodities rose in the first quarter of fiscal year 2025-26 (FY26), supported by improved availability of foreign exchange and lower prices in the international market.

6h ago