মনু নদের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ না ফেলার অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

রাজনগর উপজেলার আদনাবাদ এলাকায় মাটির নিচ থেকে জিও ব্যাগ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

মৌলভীবাজারে মনু নদ ভাঙন রক্ষা প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জিও ব্যাগ ঝুকিপূর্ণ স্থানে না ফেলে ব্যাগের মুখ কেটে বালু ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ না ফেলে নদীতে বালু ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

পাউবো সূত্র জানায়, মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা রক্ষায় ২০২০ সালের জুনে একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

তবে, এই ২ বছরে প্রকল্পের মাত্র ২৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে পাউবো সূত্র জানায়।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ না ফেলে হাজারের বেশি জিও ব্যাগের বালু বের করে মনু নদে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মৌলভীবাজারের প্রধান খরস্রোতা মনু নদের ভাঙনরোধে এবং বন্যার স্থায়ী সমাধানে নেওয়া প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা ভাসছে নদীর স্রোতে। প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাস্কফোর্সের গণনাকৃত জিও ব্যাগ কখনো প্রকাশ্যে, কখনো রাতের আঁধারে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। জিও ব্যাগের মুখ কেটে নদীতে বালু ফেলে ব্যাগ আবার ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখছে। আমরা হাতেনাতে এমন অনিয়ম দেখছি।'

'আমাদের ধারণা নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে এমন হচ্ছে। তিনি নিজের ও ঠিকাদারের আখের গোছাতে মরিয়া,' অভিযোগ করে বলেন মিলন বখত।

স্থানীয়রা জানান, রোববার রাতে পানি বাঁধের কাছাকাছি উচ্চতায় এলে স্থানীয়রা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কাছে যান জিও ব্যাগের জন্য। কিন্তু ম্যানেজার জিও ব্যাগ নেই বলে তাদের জানান। 
অথচ সাবেক ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমানসহ অনেকেই সে সময় দেখেছেন যে নদীর মধ্যে শ্রমিকরা জিও ব্যাগ ফেলছেন।

এ সময় এলাকাবাসী মাটির নিচ থেকে আড়াই মাস আগের কিছু জিও ব্যাগ উদ্ধার করে। পাশের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে কয়েক হাজার টাস্কফোর্সের গণনাকৃত খালি জিও ব্যাগ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের এ তথ্য জানানো হয়।

আদনাবাদ গ্রামের শামীম মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জিও ব্যাগ ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না ফেলে, ঠিকাদারের লোকেরা রাতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগের মুখ ব্লেড দিয়ে কেটে নদীতে বালি ফেলে ব্যাগ সংরক্ষণ করে রাখেন।'

ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার সামনে জিও ব্যাগ পানিতে ফেলতে দেখেছি। তাদের এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে, তারা উপরমহলের ভয় দেখায়।'

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্সের ম্যানেজার মো. সুহান আলী খালি জিও ব্যাগ ঘরে রাখার কথা স্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এগুলোর গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খুলে রেখেছি।'

যোগাযোগ করা হলে রাজনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বাবলু সূত্র ধর বলেন, 'অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ছেঁড়া ব্যাগ জব্দ করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।'

পাউবো রাজনগর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইফতেখার মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণ মানুষের অভিযোগ সঠিক। কোন অসাধু এ ধরনের কাজ করল বুঝতে পারছি না।'

জানতে চাইলে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Ignore Gen Z at your peril, experts tell Nepal govt

Prominent personalities warn government and parties not to dismiss the demands of youths

1h ago