লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে লাখো পূণ্যার্থী

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী স্নানোৎসব শুরু হয়েছে। ছবি: সনদ সাহা/ স্টার

লাখো পুণ্যার্থীর উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী স্নানোৎসব শুরু হয়েছে।

শুক্রবার রাত ৯টা ১১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে স্নান লগ্ন শুরু হয়। লগ্ন শেষ হবে শনিবার রাত ১১টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে। এসময়ের মধ্যে লাঙ্গলবন্দের ১৮টি ঘাটে তীর্থযাত্রীরা স্নানপর্ব সারবেন।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন। ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, আম্রপল্লব, ফলসহ পুণ্যার্থীরা স্নান করতে ব্রহ্মপুত্র নদে নামছেন। এছাড়াও স্নানঘাটগুলোতে হচ্ছে বাসন্তী পূজা।

৫০ বছর ধরে স্নানে আসেন সত্তোরর্ধ্ব হাস্য রানী বণিক। এবার পরিবারের সঙ্গে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে এসেছেন।

তিনি বলেন, ৫০ বছর আগে তখন নৌকা করে এসে দুই তিনদিন থেকে তারপর আমরা যেতাম। বাবা মা বাড়ি থেকে বিছানা, হাড়ি পাতিল, চাল ডাল নিয়ে আসতাম। এখন দিনে এসে স্নান করে দিনেই চলে যাই।'

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্নানোৎসবে পূণ্যার্থীদের ঢল। ছবি: সনদ সাহা/ স্টার

তিনি বলেন, 'দুই বছর ধরে করোনায় আসতে পারিনি। স্নান করলাম। পরিবারের সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করেছি।'

নোয়াখালির চাঁদকিন এলাকা থেকে এসেছেন শ্রীবাস দাস। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রতিবছর চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে পুণ্যলাভের আশায় লাঙ্গলবন্দে আসি। গত দুইবছর করোনা মহামারিরর জন্য আসতে পারিনি। তাই এবার সবাই এসেছি।'

চট্টগ্রাম মারোকাইল থেকে স্নানে এসেছেন পুরোহিত মাখন লাল চক্রবর্তী।

স্নানোৎসব সম্পর্কে তিনি বলেন, ত্রেতাযুগে পিতার আদেশ পালনের জন্য মাকে কুঠার দিয়ে হত্যা করে পশুরাম। মাতৃ হত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগে থাকে। কোন কিছুতেই ছাড়তে পারছিল না। তখন অশোক বনে একটি জলাধারে ডুব দিলে তার পাপমোচন হয়। সেই জলাধার লাঙ্গল দিয়ে কেটে ব্রহ্মপুত্র নদে এসে মিলিয়ে দেয়। সেই থেকে নাম হয় লাঙ্গলবন্দ। সেই থেকে মানুষ পাপমোচনের জন্য সবাই এখানে এসে স্নান করে।'

তিনি আরো বলেন, দুই বছর মানুষ আসতে না পারায় এবার পুণ্যার্থী বেশি।'

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে তিন কিলোমিটার এলাকায় নদের তীরে বসেছে মেলা। মেলায় ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজষপত্র, খেলনা বিক্রি হচ্ছে।

লাঙ্গলবন্দের বিভিন্ন মন্দিরগুলোতে চলছে ভক্তিমূলক গান। সেবাশ্রমগুলো থেকে বিতরণ করা হচ্ছে খিচুড়ি, দুধ, পানিসহ বিভিন্ন খাবার। অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দ এলাকাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ।

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী দুই কিলোমিটার রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট। ফলে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে পুণ্যার্থীদের স্নান ঘাটে আসতে হয়। এছাড়া পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে আসা মনি রানী সাহা বলেন, 'আমরা মিনারবাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আসতে হয়েছে। আর যে গাড়ি ভাড়া ছিল ২০ টাকা। সেটা ১০০ টাকা নিয়েছে। ১০০ টাকার ইজিবাইক ভাড়া ৬০০ টাকা দিতে হয়েছে।'

লাঙ্গলবন্দ স্নান উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি ষড়জ কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই বছর ৮ থেকে ১০ লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে। দুই বছর করোনা মহামারিতে বন্ধ থাকা ও সপ্তাহের ছুটির দিন হওয়ায় ভক্ত সমাগম বেশি হয়েছে।

তিনি বলেন, এই পুণ্যার্থীদের জন্য ৪০ টি সেবাক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছেন। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোও আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে স্নানোৎসব সমাপ্ত হবে।'

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এখানে দেশি বিদেশি সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী এসেছেন। তাদের নিরাপত্তায় লাঙ্গলবন্দ এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এখানে ১৫০০ অধিক পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। ওয়াচ টাওয়ারসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ টহল দিচ্ছে। এছাড়াও নৌ-পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, কোস্টগার্ডও কাজ করছে। কোনো ধরনের যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি।'

মহাসড়কে যানজট সম্পর্কে তিনি বলেন, একদিনের উৎসবে ৫ থেকে ৭ লাখ লোক সমাগম হয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে যারা গাড়ি নিয়ে আসছেন। তাদের গাড়িগুলো মহাসড়কে রেখে স্নানে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা সেই গাড়িগুলো পার্কিংয়ে পাঠিয়ে দিয়ে যানজট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো আছে। আশা করি উৎসবমুখর পরিবেশেই সমাপ্ত হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

1h ago