লালমনিরহাটে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কাজ শেষ না করেই বিল তোলার অভিযোগ

মহিষখোচা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুকুরপাড়ে ঘাট নির্মাণ শুরু করা হলেও তা ফেলে রাখা হয়েছে । ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

বাস্তবে কাজ ১৮-২০ শতাংশ হলেও ৮২ শতাংশ দেখিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি'র ইমপ্রুভমেন্ট অব পন্ডস ক্যানেলস অ্যাক্রোস দ্য কান্ট্রি প্রোজেক্টের (আইপিসিপি) বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডির কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদার এ বিল উত্তোলন করেছেন।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে মহিষখোচা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ভেলাবাড়ী ইউনিয়নে ভেলাবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুকুর পুন:খনন, সংস্কার ও পুকুরপাড়ে ঘাট নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। এ কাজের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয় ৩১ লাখ ২৬ হাজার ৭৩১ টাকা। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয় ২৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৪ টাকা। ঠিকাদার এ পর্যন্ত বিল উত্তোলন করেছেন ২৪ লাখ ২১ হাজার ৩৭২ টাকা। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মহিষখোচা স্কুল অ্যান্ড কলেজ পুকুরে এলজিইডি'র আইপিসিপি প্রকল্পের কাজটি দেখলে চোখ কপালে উঠে যাবে। পুকুরটি পুন:খনন, সংস্কার ও পুকুরপাড় সংরক্ষণ করা হয়নি। পুকুরপাড়ে কোনোরকমে একটি আরসিসি পিলার তৈরি করা হলেও সেটি এখনো পুকুরের পানিতে ডুবে আছে। অথচ ঠিকাদার এলজিইডির অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি টাকা উত্তোলন করেছেন। কোনো কাজে আসেনি প্রকল্পটি।

মহিষখোচা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শারওয়ার আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুকুরটি পুন:খনন, সংস্কার ও পুকুরপাড় সংরক্ষণসহ দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলেছিল এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজো তা করা হয়নি।'

তিনি বলেন, 'কাজের অগ্রগতির বিষয়ে আমার কাছে কোন স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। তাহলে ঠিকাদার বিল তুললেন কীভাবে?' এখন এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিচ্ছেন না। অনেক কষ্ট করে এ প্রকল্পটি পেয়েছি কিন্তু সেটি এভাবে পড়ে থাকায় আমি স্থানীয় লোকজনের কাছে সমালোচনায় পড়েছি।'

একই অবস্থা দেখা যায় ভেলাবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুকুরপাড়ে। এখানে একটি ঘাট নির্মাণ করা হলেও তা অসম্পন্ন রয়েছে। নির্মাণের পর থেকে কেউই ব্যবহার করেননি ঘাটটি। পুকুরটি পুন:খনন, সংস্কার ও পুকুরপাড় সংরক্ষণ করা হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

ভেলাবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজের পুকুরপাড়ে ঘাট নির্মাণ করা হলে তা অসম্পন্ন রয়েছে। ছবিধ এস দিলীপ রায়/ স্টার

ভেলাবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার কেউই আমার সঙ্গে সমন্বয় করেননি। আমাদের কাছে কাজের অগ্রগতিও নেওয়া হয়নি। সরকার এ প্রকল্পের জন্য এত টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অথচ কাজের মান দেখলে অস্বস্তিতে ভুগতে হয়।'

তার দাবি, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পর্কে এলজিইডি'র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।

প্রকল্পের ঠিকাদার সেলিম হোসেন খানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যতটুকু কাজ করেছি ততটুকুই বিল উত্তোলন করেছি। তবে কত টাকা বিল উত্তোলন করেছি সেটি মনে নেই। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিল দিয়েছে।'

লালমনিরহাট এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পটির কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে। এ প্রকল্পের ফান্ড না থাকায় বাকি কাজ এই মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। অবশ্যই এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Nineteen killed in Nepal in 'Gen Z' protest over social media ban

Police used live ammunition, tear gas, and water cannons against protesters demonstrating against social media restrictions and corruption

5h ago