সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ক্যানসেল কালচার’

ছবি: ফ্রিপিক

সমসাময়িক ক্যানসেল কালচার বা বয়কটের সংস্কৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রচলিত শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে সেলিব্রিটিদের সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কোনো কাজ মনে হলে গণ বয়কট করা বা এড়িয়ে চলার জন্য বলা হয়।

এই ক্যানসেল কালচার আসলে কী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন এটি করা হয় তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

বর্তমানে ক্যানসেল কালচার বা কল-আউট কালচার এমন একটি প্রক্রিয়া বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে অনলাইনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা সামনাসামনি কাউকে তার সামাজিক বা পেশাদার গণ্ডি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

সাধারণত পাবলিক ফিগার বা সেলিব্রিটিরা আপত্তিকর বা অপমানজনক কিছু করলে বা বললে তাদের কাজকে বয়কট করা হয়। ক্যানসেল কালচারের মাধ্যমে অনেক সময় শিল্পীদের চলচ্চিত্র বা সংগীত না শোনার জন্য জনসাধারণের সমর্থন আদায়ের আহ্বান জানানো হয়।

এই বাতিল বা ক্যানসেল যে শুধু কোনো ব্যক্তিকে ঘিরে হয় তা নয়। আপত্তিকর বলে বিবেচিত হলে কোনো কোম্পানি, সংগঠন, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের প্রতিও সমর্থন প্রত্যাহার বা বাতিল করার চর্চা দেখা যায়।

আর এই বাতিল করা বা ক্যানসেল করে গণ-লজ্জার এই অনুশীলনটি প্রায়শই টুইটার, ফেসবুকের, ইনস্টাগ্রাম এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘটে।

হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের সময় এই শব্দটির বেশ বিস্তার ঘটে। এ সময়ে পাবলিক ফিগার যেমন, হার্ভে ওয়েইনস্টেইন, লুই সি.কে, ম্যাট লাউয়ার, আর কেলিসহ অনেকেই অতীতে যৌন সহিংসতার অভিযোগের কারণে ক্যানসেল করা হয়।

এছাড়া অন্যান্য পাবলিক ফিগার যেমন, কেভিন হার্ট, শেন গিলিস অতীতের বর্ণবাদী এবং অ্যান্টি-এলজিবিটিকিউ মন্তব্যের জন্য ক্যানসেল হন। এছাড়া 'জেওপার্ডি' অনুষ্ঠানের মাইক রিচার্ডসকে তার ভূমিকা থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

বিতর্কিত পডকাস্টার জো রোগানকে তার রক্ষণশীল রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য বারবার বাতিল করা হয়েছে।

ডিজনি ক্লাসিকসে বর্ণবাদী বিষয়বস্তু চিত্রায়নের অভিযোগে ৭ বছরের কম বয়সী শিশুদের এখন 'ডাম্বো', 'পিটার প্যান' 'সুইস ফ্যামিলি রবিনসন' এবং 'দ্য অ্যারিস্টোক্যাটস' দেখতে নিষেধ করা হয়। 

টিভি ব্যক্তিত্ব পিয়ার্স মরগান 'গুড মর্নিং ব্রিটেন' এর সঙ্গে আরেকটি অন-এয়ার গিগ হারান।

প্রচ্ছন্ন বর্ণবাদী বৈশিষ্ট্যের কারণে ড. সিউসের ৬টি বইয়ের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।

ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্যের জন্য বিখ্যাত হ্যারি পটার সিরিজের লেখক জে কে রাওউলিংকে গত কয়েক বছর ধরে একাধিকবার ক্যানসেল করা হয়েছে।

বিখ্যাত র‌্যাপার এমিনেমকে তার গানের লিরিক্স এর জন্য ক্যানসেল করার চেষ্টা করা হয়।

অনেকেই ক্যানসেল হওয়ার পরে তাদের ক্যারিয়ার, খ্যাতি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন৷

অনেকে মনে করেন, যখন অন্য কিছু আর কাজ করে না তখন জনসমক্ষে জবাবদিহির এবং বয়কট করার এই প্রক্রিয়াটি সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে। সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে লড়াইয়ের একটি উপায় হয়ে উঠছে এই চর্চা।

তবে এই ক্যানসেল কালচারের একটি বড় সমালোচনা হলো অনেকে এটির অপব্যবহার করছে। বহু বছর আগে করা ভুলের জন্য কারো বিষয়ে নতুন করে সমালোচনা করা হচ্ছে। তাদেরকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

অনেকে মনে করছেন, এটি বর্তমানে সত্যের বিপরীতে নিয়ন্ত্রণহীন মব সাইকোলজিতে পরিণত হয়েছে।

এই ক্যানসেল কালচার অকার্যকর বলেও অনেকে সমালোচনা করছেন। যেমন এই লুই সি.কে. তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আগের চেয়ে কম হলে এখনো মঞ্চ এবং দর্শক পান। আবার মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মানুষ এখনো তার গান শোনে।

এছাড়া শুধু পাবলিক ব্যাকল্যাশের মাধ্যমে কারো ক্যারিয়ার শেষ করা কঠিন। অনেক পাবলিক ফিগারকে এ কারণে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হলেও খুব কমই সত্যিকার অর্থে ক্যারিয়ার বিচ্যুত হয়েছে।

হ্যারি পটার লেখক জে.কে. রাউলিং ট্রান্সফোবিক বিশ্বাসের কথা বলা শুরু করার পর থেকে তার নিজের ভক্তদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। যা তাকে ক্যানসেল কালচার বিতর্কের কেন্দ্রে সবচেয়ে বিশিষ্টভাবে 'ক্যানসেলড' ব্যক্তিদের একজন করে তুলেছে। কিন্তু ২০২০ সালের জুনে, রাউলিংয়ের একটি ট্রান্সফোবিক ম্যানিফেস্টো প্রকাশনার পর এই লেখকের বইয়ের বিক্রি তার নিজ দেশ গ্রেট ব্রিটেনে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Shibir-backed candidates Shadik, Farhad leading in top two Ducsu posts

Counting going on till 6:00am; turnout 78% in polls marked by festivities

3h ago