কুষ্ঠ নিরাময়যোগ্য সংক্রামক রোগ

কুষ্ঠ মানবসভ্যতার একটি প্রাচীনতম রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যেটিকে লেপ্রসি (Leprosy) বলা হয়ে থাকে। মিসর, চীন ও ভারতের প্রাচীন ইতিহাসেও এ রোগের উল্লেখ রয়েছে।

ভয়, কুসংস্কার ও লজ্জার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি এ রোগ প্রকাশ করতে চান না বা চিকিৎসা নিতে কুণ্ঠাবোধ করে থাকেন। বলা হয়ে থাকে 'সমাজ কুষ্ঠ রোগীকে ভয় পায় আবার কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তি সমাজকে ভয় পায়'।

কুসংস্কারই 'কুষ্ঠ'র চিকিৎসা ও প্রতিরোধে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা নিলে এটি পুরোপুরি দূর হতে পারে। এই নিরাময়যোগ্য রোগ সম্পর্কে প্রচলিত কুসংস্কারগুলোর একটি হচ্ছে 'পাপিষ্ঠ ব্যক্তি বা তাদের বংশধরগণ' এ রোগে আক্রান্ত হয়। বাস্তবে 'মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি' জীবাণু এই রোগের জন্য দায়ী।

ঘনবসতিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এ রোগ ছড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রায় ৮০টি দেশে এ রোগের বিস্তার রয়েছে। আমাদের দেশে বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বগুড়া ও ঢাকা জেলায় এর প্রাদুর্ভাব রয়েছে।

অথবা প্রায় ১২০ উপজেলায় এর বিস্তার আছে। মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ: এ রোগের জীবাণু সাধারণত ত্বক ও ত্বকের কাছাকাছি স্নায়ুকলাকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত স্থান অপেক্ষাকৃত বিবর্ণ হয়ে থাকে। গোটা বা ছোপ আকারে বিস্তার লাভ করে। স্নায়ু আক্রান্ত হলে স্থানটি অবশ হয়ে থাকে।

যেভাবে ছড়ায়: আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ত্বক ও শ্বাসনালীর মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে সংক্রমিত হতে পারে।

জটিলতা: আক্রান্ত স্থানভেদে জটিলতার পার্থক্য হতে পারে। হাত-পা বিকলাঙ্গ হতে পারে। চোখ নাড়াচাড়ায় সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বকের অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণে আগুনে পোড়া বা অন্যান্য দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

চিকিৎসা: আমাদের দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে এ রোগের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। সময়মতো ওষুধ খেলে কোনো জটিলতা ছাড়াই সুস্থতা লাভ করা সম্ভব। তবে জটিলতার কারণে শল্য চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধ: কুষ্ঠ রোগী ও সমাজকে সচেতন করার মাধ্যমে অনেকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

● আক্রান্ত হলে অন্যদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করবেন না।

● বিছানা, পরিধেয় ও প্রসাধনী পৃথক রাখুন।

● হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই রুমাল ব্যবহার করবেন।

● চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

● সতর্কভাবে চলাফেরা করুন। বিশেষ করে আগুন থেকে দূরে থাকুন।

আক্রান্ত হলে হীনমন্যতা ও কুসংস্কার দূরে ঠেলে দিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিন। নিজে সুস্থ থাকুন, সমাজ ও পরিবারে বসবাস করা অন্যদের সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করুন।

ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur, MRT-1, Matarbari to get special focus

Three mega projects will get special focus in the upcoming development budget with the view to providing cheaper electricity, easing Dhaka dwellers’ transportation problem and enhancing international trade for Bangladesh.

13h ago