বাজারে সরবরাহ ঘাটতি, বাড়ছে ডিমের দাম

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডিম, ডিমের দাম, বন্যা, টিসিবি,
রাজধানীতে ডিম বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। স্টার ফাইল ছবি

অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের ডিমের বাজার। সরবরাহ ঘাটতির কারণ গত সপ্তাহে বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে।

এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপরে ডিমের দাম বৃদ্ধি তাদের জন্য নতুন ভোগান্তি যোগ করেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ পর্যন্ত দেশের ১১টি জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যা কবলিত। ফলে খামারিরা দুর্ভোগে পড়েছেন এবং ডিমের উৎপাদন কমে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এছাড়া আর্দ্রতা বেশি থাকায় মুরগিগুলো ঠিকমতো খেতে পারছে না।

দেশে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে এবং উৎপাদন কমেছে ৩৫ লাখ।

ঢাকার মিরপুর এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম সিকদার জানান, তিনি গতকাল এক ডজন ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৫০ টাকা।

তিনি বলেন, 'আমি ক্রেতাদের ডিমের দাম বাড়ার কারণ বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাদের কেউ কেউ আমার ওপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।'

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য (টিসিবি) অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ডিমের দাম বাড়েনি। বরং গত মাসে দাম বেড়েছে, তাও মাত্র ৩ শতাংশ।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, গত ২০ আগস্ট থেকে ১১ জেলায় বন্যা শুরু হয়। তখন থেকে ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে।

তবে এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং দাম কমতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'গতকাল আমি প্রতি ১০০টি ডিম বিক্রি করেছি ১ হাজার ১৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ১৯০ টাকা।'

তার ভাষ্য, 'সাম্প্রতিক বন্যায় অনেক জেলার মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে এবং দাম বেড়েছে।'

সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ডিমের দাম কমে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

গাজীপুরের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় বেঁচে যাওয়া মুরগিগুলো এখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম ডিম দিচ্ছে।

এছাড়া আবহাওয়ার কারণে ডিম উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান তিনি।

এখন খামার পর্যায়ে সাদা ডিমের দাম প্রতি পিস ১১ টাকা ২০ পয়সা। আর ব্রাউন ডিমের দাম ১১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৬০ পয়সা। উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি।

ডিমের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড এগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আহমেদ বলেন, তারা সরকার নির্ধারিত দামেই ডিম বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, 'বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারের লেয়ার মুরগি পুনরুদ্ধার ও স্বাভাবিক ডিম উৎপাদন ফিরে পেতে সাত মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।'

তিনিও বলেন, 'বন্যার কারণে চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধানের কারণে দাম বেড়েছে।'

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দাবি করেন, বন্যায় প্রায় ৫ লাখ লেয়ার মুরগি ভেসে যাওয়ায় প্রায় চার হাজার প্রান্তিক কৃষক প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সেই হিসেবে ডিমের উৎপাদন ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানান তিনি।

সুমন হাওলাদার বলেন, 'আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার এবং স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

4h ago