প্রতিবেশী বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা না দিলে কী আইনি ব্যবস্থা নেবেন

প্রতিবেশী বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা না দিলে কী আইনি ব্যবস্থা নেবেন

বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রতিবেশীর রাস্তা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গাতেই এই সমস্যা বিদ্যমান।

প্রতিবেশী বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা না দিলে করণীয় ও আইনি সহায়তা সম্পর্কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

প্রতিবেশী বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা না দিলে প্রাথমিকভাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, কোনো প্রতিবেশী বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা না দিলে প্রথমেই বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করা উচিত। প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশি বৈঠক করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট জেলার লিগ্যাল এইড অফিসাসের কাছে আপস মীমাংসার জন্য আবেদন করতে পারে।

প্রতিবেশী বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা না দিলে সুরক্ষা পেতে কোনো আইন আছে কি?

হ্যাঁ, এ বিষয়ে আইনগত সুরক্ষা বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশে Easement Act, ১৮৮২ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি তার জমিতে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় পথ না পেলে তিনি 'Easement of Necessity' বা 'অত্যাবশ্যক পথাধিকার' দাবি করতে পারেন। এই আইনের ধারা ১৩ অনুযায়ী, যদি কোনো জমি বা বাড়ি এমনভাবে অবস্থিত হয় যে, তার মালিক বা বাসিন্দা অন্যের জমির ওপর দিয়ে না গেলে মূল রাস্তায় পৌঁছাতে পারেন না, তবে তিনি আইনত সেই প্রতিবেশীর জমির ওপর দিয়ে যাতায়াতের অধিকার পাবেন। এই ধরনের অধিকারকে বলা হয় 'চলাচলের স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় অধিকার' এবং এটি আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা সম্ভব।

এছাড়াও, যদি জমি কেনার সময় বা পূর্ববর্তী কোনো বন্দোবস্তে চলাচলের সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সেটিও 'Easement by Grant' হিসেবে গণ্য হতে পারে, যার আইনগত স্বীকৃতি রয়েছে। প্রয়োজনে ভূমি রেকর্ড, খতিয়ান, নকশা ও স্থানীয় সাক্ষ্য উপস্থাপন করে বিষয়টি প্রমাণ করা যেতে পারে।

ভুক্তভোগী কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন কি?

অবশ্যই, ভুক্তভোগী ব্যক্তি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। প্রথমত, তিনি পারস্পরিক আলোচনা ও স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। যদি তা ব্যর্থ হয়, তবে তার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সিভিল আদালতে মামলা দায়ের করা। তিনি সিভিল কোর্টে 'ডিক্লারেটরি স্যুট' দায়ের করে তার চলাচলের অধিকার ঘোষণা করার আবেদন করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে 'পারমানেন্ট ইনজাংশন' চেয়ে প্রতিবেশীকে চলাচলে বাধা না দেওয়ার নির্দেশ প্রার্থনা করতে পারেন।

আদালতে তিনি নিচের বিষয়গুলোর ভিত্তিতে মামলা করতে পারেন-

তার বাড়িতে যাতায়াতের কোনো বিকল্প রাস্তা নেই, প্রতিবেশীর জমি ছাড়া অন্য কোনো পথ ব্যবহার করা বাস্তবসম্মত নয়, প্রতিবেশী ইচ্ছাকৃতভাবে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।

আদালত এই তথ্যগুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন এবং উক্ত জমির উপর দিয়ে চলাচলের স্থায়ী অধিকার প্রদান করতে পারেন। প্রয়োজনে আদালত কমিশন দিয়ে সরেজমিন তদন্তও করতে পারেন।

প্রয়োজনে ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসিল্যান্ড বা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা গ্রহণ করাও যেতে পারে। যদি পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ হয়ে পড়ে, তখন পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

 আইনগত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় এই বিষয়ে?

১. সিভিল কোর্টে মামলা দায়ের করে চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠার আবেদন করা।

২. প্রতিবেশীর বাধা ঠেকাতে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Temporary injunction) চাওয়া।

৩.  চলাচলে বাধা দিলে বা হুমকি দিলে থানায় জিডি করা এবং প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ১৪৫ ধারায় আবেদন করা।

পুরাতন প্রথাগত রাস্তা বন্ধ করে দিলে কী করা যায়?

যদি কোনো জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত প্রথাগত রাস্তা থাকে এবং হঠাৎ করে কেউ তা বন্ধ করে দেন, তাহলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ওই চলাচলের অধিকারের স্বীকৃতি দাবি করতে পারেন। এটি আইন অনুযায়ী 'Easement by Prescription' নামে পরিচিত, যার উল্লেখ রয়েছে Easement Act এর ১৫ ধারাতে।

এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রমাণ করতে হবে যে, নিরবচ্ছিন্নভাবে অন্তত ২০ বছর ধরে ওই রাস্তা ব্যবহার হয়ে আসছে এবং এতে প্রতিবেশীর সম্মতিসূচক নীরবতা ছিল। প্রমাণ থাকলে আদালতের মাধ্যমে রাস্তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

জমির রেকর্ড বা খতিয়ানে রাস্তা না থাকলে কি চলাচলের অধিকার পাওয়া যাবে না?

আইনজাবী ইশরাত হাসান বলেন, রেকর্ডে রাস্তার উল্লেখ না থাকলেও চলাচলের প্রয়োজনীয়তা থাকলে আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কারণ আদালত বিষয়টি বাস্তব প্রয়োজন ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বিবেচনা করেন। যদি প্রমাণ করা যায় যে জমিতে যাতায়াতের আর কোনো বিকল্প পথ নেই, তাহলে 'Easement of Necessity' হিসেবে চলাচলের অধিকার আদালতের মাধ্যমে স্বীকৃত হতে পারে। তবে, রাস্তা ছিল এমন প্রমাণাদি থাকলে মামলায় তা আরও সহায়ক হয়।

রাস্তা সংক্রান্ত বিরোধে মারামারির ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগী কী ধরনের আইনগত প্রতিকার পেতে পারেন?

যদি চলাচলের রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারি বা শারীরিক আঘাত ঘটে, তবে এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগী স্থানীয় থানায় অভিযোগ বা এজাহার দায়ের করতে পারেন। থানায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh airport cargo fire losses

Airport fire may delay RMG, pharma production by at least two months

Local manufacturers are scrambling for raw materials after a massive fire destroyed imported production inputs at the cargo complex of Dhaka airport on Saturday.

10h ago