সবজির দাম বাড়ছে মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য ও চাঁদাবাজির কারণে

স্টার ফাইল ফটো

সাধারণত বৃষ্টি নামলেই 'আগুন' লাগে সবজির বাজারে। সাধারণ ক্রেতাদের সাধারণত শুনতে হয় 'বৃষ্টি'র কথা। 'বৃষ্টির কারণেই' সবজির দাম বাড়ে। অথচ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বলছে ভিন্ন কথা।

প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য, যথাযথ তথ্যের অভাব, চাঁদাবাজি ও পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচের কারণে খুচরা বাজারে সবজির দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

গত ২৯ জুন সবজির বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের সুপারিশ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায় বিটিটিসি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের তথ্য বলছে, জিডিপিতে কৃষির অবদান ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য কমিশনের চার সদস্যের দল বগুড়া, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, যশোর ও ঢাকা জেলার ২০টিরও বেশি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরেছেন।

ওই প্রতিবেদনের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে—সবজির বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য বেশি। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

বাজার চাহিদা, পণ্যের দাম নির্ধারণ ও আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য না পাওয়ায় কৃষকরা প্রায়ই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন যে যাত্রাবাড়ী, আমিনবাজার ও আব্দুল্লাহপুরসহ রাজধানীর প্রবেশপথে 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনী' ও 'বেসরকারি সংগঠনের' নামে সবজির গাড়ি থেকে চাঁদা নেওয়া হয়।

তবে কী পরিমাণ টাকা চাঁদা নেওয়া হয় তা নির্দিষ্ট করে জানাননি তারা।

ট্রাক পাওয়া-না পাওয়ার ওপর নির্ভর করে ভাড়া। যেমন, ফিরতি ভাড়া নিশ্চিত না হলে ট্রাকের ভাড়া বেড়ে যায় বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

বগুড়ার এক পাইকারি সবজি বিক্রেতার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাকে মহাস্থানগড় বাজার থেকে ঢাকার পাইকারি বাজারে যাওয়ার রাস্তায় অন্তত সাত জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে।

যশোর ও মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা ও এর আশপাশের পাইকারি বাজারে গাড়ির আকারভেদে ট্রাকপ্রতি 'বাজার উন্নয়ন ফি' বাবদ ১২ শ থেকে দেড় হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

এই টাকা 'সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান', রাজনৈতিক দল ও অন্যান্যদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার খুচরা বাজারে সবজির দাম নির্ধারণে মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। তারা প্রতি রাতে গড়ে আট থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন।

তবে করের আওতায় না থাকায় তারা আয়কর দেন না। এতে শুধু যে সরকার প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে তা নয়, ক্রেতারাও বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সুষ্ঠু কৃষি বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা হলেও কার্যকর সমন্বয়ের অভাবে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ও গুদামের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। এ কারণে পচনশীল পণ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, বলা হয়েছে এতে।

এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা অনেক সময় উৎপাদন খরচের কমে ফসল বিক্রিতে বাধ্য হন।

প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।

এর মধ্যে আছে—মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ, ন্যায্য দামে পণ্য কেনাবেচার জন্য সরকারি কেন্দ্র স্থাপন, চাঁদাবাজি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ও মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা।

এ ছাড়াও পরামর্শের তালিকায় আছে—যে অঞ্চলে সবজি চাষ বেশি হয় সেখানে হিমাগার ও গুদাম তৈরি করা।

এ দিকে, গতকাল সোমবার পুলিশের মিডিয়া বিষয়ক সহকারী মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর ডেইলি স্টারকে জানান, ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার অনুরোধ করছি।

Comments

The Daily Star  | English

Audits expose hidden bad loans at 6 Islamic banks

The reviews, initiated in January with backing from the ADB, expose deep-seated financial mismanagement at those banks

8h ago