চাকরি দেওয়ার নামে বিমা করিয়ে ৩১ লাখ টাকা প্রতারণা স্বদেশ ইসলামী লাইফে
চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১১ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৩১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করার পর তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের শর্ত হিসেবে তাদেরকে স্বদেশ লাইফে বিমা পলিসি খুলতে বাধ্য করা হয়। এভাবে তাদের কাছ থেকে মোট ৩০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা কিস্তিতে আদায় করা হয়। তবে, শেষ পর্যন্ত কাউকেই চাকরি দেওয়া হয়নি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি।
এ ঘটনায় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তবে আইডিআরএ বলছে, বিষয়টি সম্পূর্ণ বিমা কোম্পানির এখতিয়ারভুক্ত। অন্যদিকে কোম্পানি বলছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
গত ১৯ অক্টোবর আইডিআরএর কাছে জমা দেওয়া অভিযোগে ভুক্তভোগীরা জানান, ইন্টারনেটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তারা আবেদন করেছিলেন। পরে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, যোগদানের আগে তাদের বিমা পলিসি করতে হবে। চলতি বছরের ২৫ মে থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে তাদের ধাপে ধাপে যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
বেশির ভাগ ভুক্তভোগী ঋণ করে পলিসির টাকা জমা দিয়েছিলেন। এখন টাকা ফেরত না পাওয়ায় পাওনাদারদের চাপে দিশাহারা তারা।
প্রতারণার শিকার হয়েছেন আশঙ্কা করে ভুক্তভোগীরা আইডিআরএ ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) অভিযোগের অনুলিপি পাঠিয়েছেন।
আব্দুল মান্নান নামের একজন ভুক্তভোগী গত অক্টোবরে পল্টন মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা এখন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার কাওসার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা যেভাবে পলিসি বিক্রি করেছেন, তা সঠিক প্রক্রিয়া ছিল না। তবে অভিযোগকারীরা এখন কোম্পানির গ্রাহক। আইন অনুযায়ী, ২৪ মাসের আগে পলিসির সমর্পণ মূল্য (সারেন্ডার ভ্যালু) পাওয়া যায় না। যেহেতু মাত্র একটি কিস্তি জমা পড়েছে, তাই এই মুহূর্তে টাকা ফেরত দেওয়া আইনত সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে যে লেনদেন হয়েছে, তার দায় কোম্পানি নিতে পারবে না। তবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইডিআরএর মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, বিমা আইন অনুযায়ী বিমা কোম্পানির উপদেষ্টা বা প্রধান নির্বাহী ছাড়া অন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিমা আইনের ১০ ও ৫০ ধারায় এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর না হলে এ ধরনের প্রতারণা বিমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমাবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেওয়া প্রতারণা ও দণ্ডনীয় অপরাধ। ভুক্তভোগীরা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ অনুযায়ী মামলা করতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, কিছু কোম্পানি মনে করে আইডিআরএ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। এই ধারণা থেকেই তারা গ্রাহকের টাকা অপব্যবহার ও চাকরির নামে প্রতারণায় উৎসাহিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে স্থায়ী আমানত আত্মসাৎ ও বিমা আইন লঙ্ঘনের দায়ে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যানসহ ১২ জন পরিচালককে অপসারণ করেছিল আইডিআরএ।
সারা দেশে কোম্পানিটির ৩০টির বেশি শাখা এবং প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক রয়েছে।


Comments